বাংলার সুলতান হযরত শাহ জালাল রাহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনি Short biography of Hazrat Shah Jalal Rah


বাংলার সুলতান হযরত শাহ জালাল রাহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনি


Short biography of Hazrat Shah Jalal Rah



 আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহ। 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামিন। ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা নাবিয়্যিহী মোহাম্মদী ওয়া আলেহী ওয়া আসহাবী আজমাঈন।

 সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা

আজ সম্পূর্ণ ব্যাতিক্রম একটি পোস্ট করবো, যার মাধ্যমে সোনার বাংলার মানুষ একমাত্র মনোনীত ধর্ম ইসলাম কে পেয়েছি। সেই মহান আল্লাহর ওলি, বাংলার সুলতান হযরত শাহ জালাল রাহঃ এর অতি সংক্ষিপ্ত আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। যদিও আমার মতো নাদানের কোন যোগ্যতা নেই উনার বিষয়ে লেখার। আপনাদের দোয়ার বরকতে চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। 

হযরত শাহ্ জালালই য়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র সংক্ষিপ্ত জীবনী


বাংলাদেশ আসাম তথা বৃহত্তর বঙ্গ ইসলামের আলোকে আলোকিত করার ক্ষেত্রে যাঁর নাম সবচেয়ে উজ্জ্বলএবং এদেশের সূফি, দরবেশ,আউলিয়াগণের মাঝে যাঁর প্রভাব ওমর্যাদা সবচেয়ে বেশী লক্ষ্য করা যায় তিনি সুলতানে বাংলা,হযরত মাওলানা শাহ্জালাল মুজার্রদ ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

এতদঞ্চল ধর্ম-বর্ণ,শ্রেণী নির্বিশেষে জন সাধারণের মাঝে তাঁর প্রতি ভালবাসা ও নামের মাহাত্ম ব্যাপক ও অতুলনীয়।

নামঃ হযরত শাহ্জালাল মুজার্রদ ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর

পূর্ণ নাম

 জালালুদ্দীন জালালুল্লাহ্।আপামর জনসাধারণের মাঝে প্রচলিত নাম হযরত শাহ্জালাল(রাঃ)।

লকব/উপাধিঃ

সংক্ষেপে আমরা বলতে চাই যেঃ

(ক) একজন ব্যক্তি অনেক সময় সমাজে তার জন্ম স্থানের নামে পরিচিত হন।যা তাঁর মুল নামের শেষে সংযুক্ত থাকে। যেমন- হযরত জুনাইদ বাগদাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

(খ) অনেক সময় একজন ব্যক্তি তার অর্জিত বিশেষ জ্ঞান, প্রজ্ঞা, গুন বা দক্ষতার কারনে ও সমাজে পরিচিতি লাভ করেন। যেমন- হযরত আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলবি রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

(গ) একজন ব্যক্তি তার জন্ম স্থানের নামে পরিচিত না হয়ে বরং জীবনের দীর্ঘ সময় কিংবা মৃত্যুকাল পর্যন্ত যে স্থানে বাস করেছেন সে স্থানের নামেও পরিচিত হন। যেমন-হাজী এমদাদুল্লা মুহাজিরে মক্কি রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

ঐতিহাসিক ও জীবনীকারগণের তথ্যগত বিচ্যুতি ও মতভেদের কারনে হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও শায়খ জালালুদ্দীন তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর জীবনেতিহাস নিয়ে দ্বন্ধ সৃষ্টি হলেও উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে আমরা বলতে পারি যে 

হযরত শাহ্ জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি-ইবনে বতুতা বর্ণিত জালালুদ্দীন তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যা সমসাময়িক এবং পরবর্তি নির্ভরযোগ্য ঐতিহাসিক সুদৃঢ় ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত। 

হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বহুমুখি গুণাবলি ও আধ্যাত্মিক ক্ষমতার কারনে বাংলার মুসলিম সমাজে বহু লকব বা গুণবাচক উপাধি দ্বারা বিভূষিত। বিভিন্ন শিলালিপি, ঐতিহাসিক ও মনীষীগণের বর্ণনা ও গবেষকগণের রচনাবলীতে সাধারণত নিম্নলিখিত লকবগুলি পাওয়া যায়ঃ 

শেখ,শায়খুলমাশায়েখ, কুতুব, মুজার্রদ, মখদুম, সুলতানুল বাংলা, আরিফান বুয়দ, কুতুব বুয়দ, মাওলানা, জালালুদ্দীন, তাবরিজী,ইয়েমেনী, কুন্যাভী,তাইজী,সি রাজী, প্রাচ্য-সূর্য, ইত্যাদি।

 তাঁর কুনিয়াত হল কোরাইশী।

পিতার নামঃ

হযরত শাহ্জালাল ইয়েমনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পিতার নাম হযরত শেখ মুহাম্মদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

তিনি একজন কোরাইশ বংশীয় স্বনামধন্য খ্যাতিমান দরবেশ ছিলেন। তিনি প্রখ্যাত দরবেশ হযরত আবু সাঈদ তাবরিজীর মুরীদ ও খলিফা ছিলেন। 

হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মত বুজুর্গ ব্যক্তি হযরত আবু সাঈদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর ফয়েজ হাসিল করেন। সুতরাং হযরত আবু সাঈদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর খিলাফত পাওয়া যে কোন লোকের জন্য সহজ বিষয় ছিল না।

আরও পড়ুন ছালাম আবাদ শরীফের হুজুর কেবলার জীবনি

 সম্ভবত এ কারণেই শেখ মুহাম্মদ কোরাইশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি জন্মগতভাবে ইয়েমেনী হলেও সূফী ধারা মোতাবেক নামের শেষে পীরের তাবরিজী উপাধি ধারণ করায় নাম হয়েছে শেখ মুহাম্মদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি যা বিভিন্ন শিলালিপি ও ঐতিহাসিক বর্ণনায় পাওয়া যায়। 

শায়খ শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর বিদুষী মাতা ছিলেন সাইয়্যেদ বংশীয়। হযরত শেখ মুহাম্মদ কোরাইশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর পিতার নাম ছিল হযরত শেখ ইব্রাহিম কোরাইশী রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

জন্ম তারিখ ও স্থানঃ ইবনে বতুতার বর্ণনা অনুসারে গবেষকগণের মতে হযরত

শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ৭৪৬ হিজরী সনে ১৯শে জিলক্বদ ওফাত (ইন্তেকাল) বরণ করেন। সে মতে তাঁর ১৫০ বছর জীবনকাল ধরে জন্ম সাল হয় (৭৪৬-১৫০)= ৫৯৬ হিজরী। 

তাঁর জন্মস্থান হল ইয়েমেনের তাইজ নগরীর কুন্যা নামক স্থানে। এখানে একটি বিষয় উল্লেখ্য যে, কোন কোন লেখক হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এবং শায়খ জালালুদ্দীন তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে আলাদা দুজন দরবেশ বর্ণনা করে জালালুদ্দীন তাবরিজীর জন্ম ও ইন্তেকালের তারিখ এবং পান্ডুয়াতে তার মাজার বলে উল্লেখ করেছেন। 

কিন্তু যে সমস্ত গ্রন্থের সূত্রে তা বর্ণিত হয়েছে মূল গ্রন্থে তা বর্ণিত হয়নি। সে গুলো পরবর্তিতে অপ্রমাণিত হয়েছে এবং পান্ডুয়াতে তার মাযার নেই বলে সেখানকার খাদেমগণই বর্ণনা করেন। সেখানে তার জওয়াব সমাধি বা স্মৃতি সৌধ বিদ্যমান।

শিক্ষাঃ

হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর পিতা-মাতা শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। তখন তাঁর লালন-পালন ও শিক্ষা-দীক্ষার ভার গ্রহণ করেন তাঁর বুযুর্গ মামা সৈয়দ আহমদ কবির সোহরাওয়ারদি রহমাতুল্লাহি আলাইহি।

তিনি সোহরাওয়ারদীয়া ত্বরিকার একজন প্রখ্যাত সুফি দরবেশ এবং মক্কার বিশিষ্ট আলেম ছিলেম। হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর শিক্ষা সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় না। 

তবে পর্যটক ইবনে বতুতার বর্ণনায় হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে তাঁর মুরীদ কর্তৃক মাওলানা সম্বোধন থেকে প্রমাণ পাওয়া যায় যে তিনি বিদ্যা শিক্ষায় শিক্ষিত একজন আলেম ছিলেন। 

এছাড়াও হযরত শায়খ্ আবু সাঈদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বাহাউদ্দিন সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও ৭ম শতাব্দীর মুজাদ্দীদ হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর মত জগত খ্যাত তরিকতের ইমাম ও বুযুর্গ দরবেশ সাধকগণের শিষ্যত্ব ও সান্নিধ্য ও হযরত কুতুব উদ্দীন বখ্তিয়ার কাকী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত ফরিদ উদ্দীন শকরগঞ্জ রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত নিযামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হাদীস বিশারদ হযরত বাহাউদ্দীন যাকারিয়া মুলতানী রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত শেখ ফরিদ উদ্দীন আত্তার রহমাতুল্লাহি আলাইহি, হযরত বোরহানুদ্দীন সাগরজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর মত যুগের দিকপাল মহান মনীষীগণের সাথে গভীর বন্ধুত্ব থাকাটাও প্রমাণ করে যে, হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি আধ্যাত্মি অতিন্দ্রীয় জ্ঞান তো বটেই ইন্দ্রীয়গ্রাহ্য জ্ঞান রাজ্যের বিভিন্ন শাখায় ও বুতপত্তি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

হযরতের পীরগনঃ

হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনী রহমাতুল্লাহি আলাইহি শৈশব থেকে প্রায় ২২/২৩/৩০ বছর পর্যন্ত মামা হযরত সৈয়দ আহমদ কবির সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিবিড় তত্ত্বাবধানে শরীয়ত ও মারফতের দীক্ষা গ্রহন ও আধ্যাত্নিক সাধনা করেন।

 এরপর তিনি আবু সাঈদ তাবরিজী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর নিকট মুরীদ হন এবং তাঁর সোহ্বতে প্রায় দুই বছর কাটান। এরপর হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি সোহরাওয়ার্দী ত্বরিকার ইমাম হযরত শায়খ শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট মুরীদ হন। 

এ সূত্রে হযরত শেখ সাদী রহমাতুল্লাহি আলাইহি হন তাঁর পীর ভাই বাসতীর্থ। শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রায় ৭ বৎসর শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর সান্নিধ্যে কাটান।

 তাঁর ইন্তেকালের পর হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি হযরত শিহাবুদ্দীন সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর সুযোগ্য পুত্র শায়খ হযরত বাহাউদ্দিন সোহরাওয়ার্দী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর নিকট মুরীদ হন এবং দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছর তাঁর খেদমতে ছিলেন।

সিলেটের পথে বাংলায় আগমনঃ

বিভিন্ন জীবনীকারগণের বৃত্তান্ত থেকে জানা যায় যে, হযরত শাহ্জালাল বাংলাদেশের সিলেটের আগমনের পূর্বে একটি স্বপ্ন দেখেন। সেই স্বপ্নের বৃত্তান্ত পীর মুর্শিদ ও মামা সৈয়দ আহমদ কবীর সোহরাওয়ার্দী এবং সংগীয় পীর বাহাউদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর নিকট বর্ণনা করেন। 

স্বপ্নের বৃত্তান্ত শুনে অবিলম্বে হিন্দুস্তান যাত্রার আদেশ দেন। স্বপ্নের ইঙ্গিত মতে মুর্শিদ একমুষ্ঠি মাটি তাঁর হাতে দিয়ে বলেন, এই মাটির বর্ণ,গন্ধ ও স্বাদ যেখানে পাইবে সেখানেই তুমি অবস্থান ঠিক করিবে। তিনি আর ও বললেন, এই মৃত্তিকা মুষ্ঠি যে স্থানে পরিত্যাগ করিবে সে স্থানের মহত্ত্বের আর তুলনা থাকিবে না। 

পীরের নির্দেশের পর হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বাংলাদেশে আসার আগে জন্মভূমি ইয়েমেন গমন করেন। সেখানে পূর্বপুরুষ ও মাতা-পিতার মাযার যিয়ারত করেন এবং উলুহিয়াতের তত্ত্ব প্রচার করেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব ও গুণে আকৃষ্ট হয়ে দলে দলে লোক তাঁর দিকে ধাবিত হয়।

 এতে ইয়েমেন রাজা ঈর্ষান্বিত হয়ে হযরত শাহজালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি কে বিষ মিশ্রিত শরবত দ্বারা কামালত পরীক্ষা করতে চাইলেন। হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি বিষ মিশ্রিত শরবত বিসমিল্লাহ বলে পান করলে সে বিষের প্রতিক্রিয়ায় উল্টো ইয়েমেন রাজই মৃত্যুবরণ করে।

ইয়েমেনের পরবর্তী রাজা শাহ্জাদা আলী পিতার মৃত্যু এবং শাহ জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর অলৌকিক ঘটনা দেখে তাঁর ভক্তে পরিণত হন এবং শাসকের তখ্তে (সিংহাসনে) না বসে শায়খ শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর সাথী হতে চাইলেন কিন্তু হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি তাকে রাজ্য পরিচালনার ভার দিয়ে ইয়েমেন হতে যাত্রা করেন। 

ইয়েমেন হতে হযরত শাহ্জালাল বাগদাদ আসেন।বাগদাদে হযরত বাহাউদ্দীন সোহরাওয়ার্দীর নিকট হতে পুনরায় বিদায় গ্রহন করেন। সেখানে থেকে বিশ্বের প্রধান প্রধান জনপদে কিছুদিন করে অবস্থান করে সমরকন্দ, আফগানিস্তান হয়ে মুলতান উপস্থিত হন। মুলতান হতে হযরত শাহ্জালাল দিল্লীতে এসে উপস্থিত হন। 

ইয়েমেনের শাহ্জাদা আলী সিংহাসন ছেড়ে এসময়ে তাঁর সাথে মিলিত হন। দিল্লীতে হযরত নিজামুদ্দীন আউলীয়ার সাথে তাঁর সাক্ষাত হয়। এ প্রসঙ্গে একটি ঘটনা বর্ণিত রয়েছে, হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি দিল্লীতে অবস্থানকালে হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এঁর একজন শিষ্য জানালেন যে,আরব দেশ থেকে এক দরবেশ এসেছেন তিনি নারী মুখ দর্শণ করেন না। 

চাদর দিয়ে মুখ ঢেকে পথ চলেন এবং সবসময় একজন কম বয়সী সুদর্শন বালক কে সঙ্গে রাখেন। হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া উতসুক হয়ে একজন শিষ্যকে পাঠালেন দরবেশকে নিয়ে আসার জন্য। হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি অবস্থা বুঝতে পেরে প্রেরিত শিষ্যের হাতে একটি কৌটার মধ্যে তুলা দিয়ে তার উপরে একটি জ্বলন্ত অঙ্গার দিয়ে কৌটার মুখ বন্ধ করে ফেরত পাঠান। 

হযরত খাজা নিজামুদ্দীন আউলিয়া কৌটার মুখ খুলে দেখলেন যে, তুলার উপর একটি জ্বলন্ত অঙ্গার কিন্তু এতে তুলার একটি আশও জ্বলছে না। হযরত নিজামুদ্দীন আউলিয়া রহমাতুল্লাহি আলাইহি এ ঘটনা থেকে আগত দরবেশের কামালিয়াত ও ফজিলত বুঝতে পারলেন এবং নিজেই হযরত শাহ্জালাল ইয়েমেনীর সাথে সাক্ষাত করেন এবং শ্রদ্ধা ও প্রীতির নিদর্শন স্বরূপ একজোড়া কবুতর উপহার দেন। 

সে সময় থেকে আজও এ কবুতর জালালী কবুতর নামে পরিচিত ও প্রসিদ্ধ। দিল্লী থেকে হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি মুর্শীদ প্রদত্ত মাটি সহকারে বাংলাদেশে আগমণ করেন। খুলনা, রংপুর, সোনারগাঁ সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় সফর করেন। এখানে প্রাসঙ্গিক একটি বিষয় উলেৱখ করা প্রয়োজন। 

তা হল, হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি যখন ত্রিপুরা রাজ্যের বর্তমান কুমিল্লা সফর করছিলেন তখন কুমিল্লার মাটির সাথে মুর্শীদ প্রদত্ত মাটির মিল পেয়ে তিনি বলেছিলেন কুহু মিলা। কিংবদন্তি অনুসারে কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে সেখান থেকে কুমিল্লা শব্দটির উতপত্তি। 

কুমিল্লার যে স্থানটিতে একটি টিলার উপরে হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি কিছুদিন অবস্থান করে ধ্যানমগ্ন হয়ে স্রষ্টার ইবাদত বন্দেগীতে নিমগ্ন ছিলেন, সেখানে তাঁর কর্তনকৃত চুল ও নখ প্রোথিত আছে। এখানে নয়নাভিরাম টিলার উপরে ঐ আস্তানাটি রয়েছে। আস্তানাকে কেন্দ্র করে একটি জওয়াব সমাধী, মসজিদ ও মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে।

 বর্ণিত রয়েছে যে, এই আস্তানাটির নিকটবর্তী শাহ্পুর গ্রামে ভারতের ভাগলপুর হতে আগত প্রায় ২৫০ বছর পূর্বের প্রসিদ্ধ আউলিয়া হযরত শাহ্ নুরুর্দ্দীন আলক্বাদেরী প্রকাশ্যে হযরত বন্দী শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলাইহি প্রতি বৃহস্পতিবার হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি মাজার শরীফ সিলেট থেকে চট্টগ্রাম হযরত শাহ আমানত রহমাতুল্লাহি আলাইহি দরগায় পদব্রজে সফর করতেন।

সিলেট বিজয়ঃ

সুলতান শামসুদ্দীন ফিরোজ শাহের আমলে ৭০৩ হিজরীতে শাহ্জালাল ইয়েমেনী আধ্যাত্মিক শক্তির সাহায্যে সিলেট বিজয় করেন। বর্ণিত আছে যে, গৌড় গোবিন্দ কর্তৃক শেখ বুরহানুদ্দীনের শিশু পুত্র হত্যার প্রতিবিধানার্থে প্রেরিত সিকান্দার গাজীর বাহিনী গৌড় গোবিন্দের ঐন্ত্রজালিক ক্ষমতার কারণে বারবার পরাভুত হয়। অবশেষে হযরত শাহ্জালাল রহমাতুল্লাহি আলাইহি ও তাঁর অনুসারী ৩৬০ আউলিয়া সহযোগে গৌড় গোবিন্দের ঐন্ত্রজালিক ক্ষমতাকে পরাভূত করে সিলেট বিজয় করা হয়।


মহান আল্লাহ তায়ালা আমাদের, মহান আওলিয়া কেরামের সহবতে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।


WhatsApp +8801323257351 কোন বিষয়ে পোস্ট চান তা জানাতে শুধু মেসেজ দিবেন। দয়া করে কেউ কল করবেন না।

2 Comments

  1. সারসিনা হুজুরের জীবনি দেন

    ReplyDelete
  2. ছালাম আবাদ শরীফের হুজুরের জীবনি দেন

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post