ছালাম আবাদ দরবার শরীফের মহান প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব শাহ ছুফি হযরত মাওলানা সাইফুল মালেক রাহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনি

ছালাম আবাদ দরবার শরীফের মহান প্রতিষ্ঠাতা আলহাজ্ব শাহ ছুফি হযরত মাওলানা সাইফুল মালেক রাহঃ এর সংক্ষিপ্ত জীবনি

SALAM ABAD SHORIF


এক মহান ওলীর সংক্ষিপ্ত জীবনী : 

পরিচয়  ঃ জামালপুর জেলার শৈলের কান্দা গ্রামের এক ছায়াঘেরা নিবির শান্ত পরিবেশে সভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে বাংলা ১৩৩০ সনে চৈত্র মাসের এক সোমবার দিনের ফজর ওয়াক্তে উক্ত মহান ওলী হযরত শায়খ ছাইফুল মালেক ( রাহঃ ) সাহেব জন্ম গ্রহণ করেন । 

তার পিতার নাম আলহাজ্ব সৈয়দ আলী আহমদ এবং মাতার নাম মোছা : সালমা বেগম । পিতা ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ ও নীতিবান গ্রামের বিশিষ্ট একজন মাতব্বর । ন্যায়নীতির প্রশ্নে আপোষহীন ও কঠোর ছিল তার স্বভাব এবং মহৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন তিনি । 

মা সালমা বেগম নানা গুনে বিভূষিতা ছিলেন , সততা , সত্যবাদিতা , নম্রতা , পবিত্রতা প্রভৃতি গুনে ততকালীন মহিলাদের ম ধ্য ছিলেন অন্যতম , অতীব স্নেহময়ী , সর্বোপরি অত্যান্ত বুদ্ধিমতি মহিলা বলে তার যথেষ্ট ক্ষেতি ছিল । | 

বংশ পরিচয় : শাম দেশ ( বর্তমান সিরিয়া ) হতে আগত এক প্রখ্যাত সৈয়দ বংশে হযরতের জন্ম । তার সপ্তম উর্ধ্বতন পুরুষ সৈয়দ কেনান হযরত শাহ্তৰ্জালাল ( রা :) এর এই দেশে আগমনের সমকালীন যুগে সিরিয়া হতে পাক ভারতে এশায়াতে দীন প্রচারের উদ্দেশ্যে আগমন করেন ।

 বিভিন্ন জায়গায় দীন প্রচারের কাজ করে অবশেষে বর্তমান জামালপুর জেলার সদর থানার অন্তর্গত শৈলের কান্দা নামক গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন । তিনি ছিলেন এক নেককার হাদীয়ে দীন । তার পবিত্র বংশ ধারায় একজন না একজন সকল সময়ই হেদায়েতের দায়িত্ব বহন করে আসছেন । 

সৈয়দ কেনানেরই ৬ ষ্ঠ অধস্তন পুরুষ হলেন হযরত শায়খ ছাইফুল মালেক ( রাহঃ ) সাহেব তার অপর এক ভাই হযরত শায়খ মোঃ আব্দুস ছামাদ ( মাঃ জিঃ ) তিনিও তরীকতের উচ্চস্তরের এক ওলীয়ে কামেল । বড় ভাই হযরত শায়খ ছাইফুল

মালেক সাহেবের নিকট হতে খেলাফত প্রাপ্ত । শায়খের আরও তিন উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে একজন সরকারী কলেজের প্রফেসর , একজন ইঞ্জিনিয়ার ও একজন আইনজীবী


 শায়খের শিক্ষা জীবন  ঃ 

প্রথমে সেই কালের নিয়মানুসারে মক্তবে পিতার নিকট তার পড়াশুনা শুরু হয় । কোরআন শরীফ ও জরুরীয়াতে দীনের এলেম এই খানেই তিনি হাসিল করেন । অতঃপর আরও শিক্ষার জন্য স্কুল জীবন শুরু হয় । 

ছোট বেলা থেকেই তিনি অত্যন্ত নম , ভদ্র ও সৎ চরিত্রের অধিকারী ছিলেন । গ্রামের ছেলেদের সাথে খেলাধুলা কিংবা কোন গল্প গুজবে মেতে থাকতেন না । নিঃসঙ্গ জীবন যাপনই বেশী পছন্দ করতেন । 

আমার এক বন্ধু জনাব মোঃ আব্দুল জলীল ইঞ্জিনিয়ার তার পিতা মোঃ বাজিতুল্লাহ সরকার থেকে বর্ণনা করেছেন যে , আমার পিতা এবং আপনার পীর ছাহেব হুজুর নান্দিনা পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে একই শ্রেণীতে পড়ালেখা করেছেন , একদিন আমার আব্বা আপনার পীর ছাহেবকে হাসি ঠাট্টাসরূপ কিছু কথা বলেছিলেন , তখন তিনি বলেছিলেন বাজিত এমন কথা আমার সাথে বলিও না । 

তাহলে আমি তোমার সঙ্গ ত্যাগ করবো । আমি আমার আব্বার মুখে আরও শুনেছি যে , স্কুলের ছাত্র - ছাত্রী এবং শিক্ষক মহোদয় সকলেই তাকে খুব আদর করতেন । স্কুল জীবনে অনেক গুণের অধিকারী তিনি ছিলেন । তবে যাই হোক চৌদ্দ বছর বয়সে তিনি প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন । 

আরও পড়ুন সারসিনা হুজুরের জীবনি 

অর্থনৈতিক সংকট ও ছোট ভাইদের পড়ালেখা ও সংসারের দায়ীত্বের কারণে এই খানেই তার বিধিবদ্ধ পড়ালেখা ইতি টানতে হয় এবং বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়ে অবশেষে বৃটিশ নৌ বাহিনীতে যোগ দেন । কিছু দিন চাকুরী করার পর দাড়ি কর্তনের নির্দেশ দেওয়ায় মতবিরোধ দেখা দেয় । 

ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে চাকুরি ছেড়ে দেন । এই চাকুরী পরিত্যাগ করে পরবর্তীতে রেলওয়ের একাউন্টস সেকশনে চাকুরীতে যোগ দেন । পরে চট্টগ্রামের রেলওয়ে হেড কোয়াটারে পোষ্টিং পান । ২৬ বছর বয়সে তিনি

 বিবাহ করেন । ইহা যেন আল্লাহর ওলীর জীবনে এক কুদরতী ব্যবস্থা । কেননা এই চট্টগ্রামে চাকুরী অবস্থায় কোন এক শুভ দিনে ইমামুত তরীকত হযরত শায়খ বুরহান উদ্দীন ( রহঃ ) এর হাতে তিনি বায়াত গ্রহণ করেন । ঘটনাটি অতিব চমৎকার । 

চট্টগ্রাম টাইগার পাশ রেলওয়ে কলোনীতে তখন হযরত শায়খ থাকেন । তার ঐ এলাকায় হাজী মসজিদে তখন অবস্থান করেন ইমামুত তরীকত হযরত শায়খ বুরহান উদ্দীন ( রহঃ ) । হাজার হাজার মারেফাত পিয়াসী মানুষ প্রতিদিন তার দরবারে ভীড় জমান । তালিম ও জিকিরের পবিত্র গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে থাকে তার দরবার । 

বাতির নীচে অন্ধকারের ন্যায় কিছু বিদ্রোহী ও এলাকায় ছিল তাদেরই কারো মুখে এই দিক সেইদিক কিছু কথা শুনিয়া ২৬ বছর বয়সের যুবক সফর উদ্দীনের ( হযরতের পিতৃদত্ত নাম ) উত্তেজনা সৃষ্টি হয় । শায়খের মোকাবেলা করার জন্য তিনি তার কাছে উপস্থিত হন । কিন্তু আল্লার অপার মহিমা !

 শায়খের দরবারে গিয়ে তিনি এমনই প্রভাবান্বিত হয়ে পড়েন যে , তার যেন মনে হইতেছিল এই খানেই তার জীবন যাত্রার আখেরী মনজিল , এই খানেই তিনি খুজে পাবেন জীবনের মাকছুদ । পরম স্নেহে হযরত শায়খ তাকে বায়াত করলেন । শায়খ যেন তার মাঝে একটা কিছু দেখেছিলেন বায়াতের পর হযরতের পিতৃদত্ত্ব নামের স্থলে শায়খ তার নাম রাখলেন ছাইফুল মালেক ।

 কি জানি কি ছিল শায়খের মনে । শায়খের দেয়া এই নামেই আজ তিনি বিখ্যাত ও পরিচিত । বায়াত গ্রহণের পরই হযরতের জীবনের সকল দিকের আমূল পরিবর্তন হয়ে যায় । দুনিয়ার মোহ মায়া হতে আশ্চর্যজনক ভাবে তিনি বিমুগ্ধ হয়ে যান । একাধারে দুই বছর তিনি কঠোর রিয়াজতে নিমগ্ন থাকেন । রিয়াজত জীবনের পূর্ণ এক বছর তার মজযুবীর হালতে কাটে । অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাড়ায় যে , জীবনের প্রতি সম্পূর্ণ উদাসিন হয়ে পড়েন । সংসার অচল হয়ে যায় ।

 তিনি বেহাল হয়ে পড়েন । শায়খ একদিন প্রিয় মুরীদকে কাছে ডেকে শক্ত করে ধমক দেন । এর পর ধীরে ধীরে তার হালত বাস্তবে ফিরে আসে । শুরু হয় এক অপূর্ব মহব্বতের জীবন । রিয়াযতের কঠিন স্তর সমূহ স্নেহময় শায়খের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে অতিক্রম করতে গিয়ে হুব্বুল্লার অতল সাগরে ডুবে গেলেন ।তান । অতঃপর জীবনের আরাধ্য কর্মে আল্লাহ পাকের অপার রহমতে সফলতা হাসিল করেন ।

 শায়খের দরবার হতে খেলাফতের জিম্মাদারী তার উপর ন্যাস্ত । হলো । পূর্ব হতেই কোন রকমে কষ্টের ভীতর দিয়ে সংসার চলতেছিল । ভাইদের পড়াশুনা সহ সংসারের সকল কিছুই ছিল তার কাঁদে । এর মাঝে সকলের অনিচ্ছার ভিতর দিয়েও ১৯৬৮ সনে জানুয়ারী মাসে উপার্জনের একমাত্র মাধ্যম চাকরীখানা ছেড়ে দিলেন । পরিবারের সকলেই একটি অনিশ্চিত অবস্থার কথা চিন্তা করে শঙ্কিত হয়ে পড়েন ।

 কিন্তু হযরত যেন এর মাঝে খুজে পেলেন এক অপূর্ব শান্তি - আল্লাহ পাকের উপর পরম নির্ভরতার আনন্দ । রাব্বুল আলামীন ও নিজের মাঝের দুরত্ব অপসারণ করে দিলেন যেন তিনি । পরম করুনাময়ের উপর নির্ভরতা তাওয়াক্কোলের নূরে উদ্ভাসিত এক নূরানী জেন্দেগীর সন্ধান পাইলেন এবং আল্লাহর রহমতে তিনি তা হাসিল করলেন ।

 ১৯৫৪ ইং সনে হযরত শায়খ বুরহান উদ্দীন ( রহঃ ) হজ্বে যাচ্ছেন । ৭২ জন মুরীদ তার অনুগামী হলেন । হযরত ছাইফুল মালেকের নাম লটারীতে ওঠলনা । দুঃখে তার অন্তর ফেটে চৌচির হয়ে গেল । বিদায় বেলা তিনি পরম শ্রদ্ধেয় মুরশীদ কিবলার বিয়োগ ব্যাথা অন্তরে লয়ে জাহাজ ঘাটে দাড়িয়া আছেন ।

 চক্ষু অশ্রু ভারাক্রান্ত । হযরত শায়খ সঙ্গী - সাথীসহ জাহাজে আরোহন করলেন । ছাইফুল মালেক ছাহেব স্থির দাড়িয়ে থাকতে পারল না । আল্লাহ পাকের দরবারে তার সকাতর ফরিয়াদ সমস্ত হৃদয়দেশ আন্দোলিত করে বের হয়ে আসল । এদিকে জাহাজ ছেড়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়ে কয়েক ঘন্টা চলে গেল ।

 জাহাজ ছাড়ে না । অবশেষে । জানা গেল জাহাজের তলা ফেটে গেছে । মেরামতের বহু সময় লাগবে । এক দিন বিলম্ব হবে । এই কথা শুনে যাত্রীদের কেহ কেহ নেমে আসলেন । এমনি অবস্থায় পুনরায় জাহাজ ছাড়ার সময় জানা গেল । এক জনের সিট খালি । 

কেহ ইচ্ছে করলে তদস্থলে যেতে পারেন । এই ঘোষনা প্রচারিত হলো । শুনে হয়রত ধীরে ধীরে জাহাজ ঘাটে আসলেন । দেখলেন প্রিয় মুরশীদ জাহাজের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছেন এবং তার দিকে চেয়ে তিনি মৃদু মৃদু হাসতেছেন ।

 হযরত ছাইফুল মালেক সকলই বুঝলেন এবং শেষ পর্যন্ত তিনি তার মুরশীদ কেবলার সাথে জীবনের প্রথম হজ্বে রওনা হলেন । হজ্বে যাওয়ার সৌভাগ্য সেই যে , তার জন্য খুললো আর বন্ধ হলো না । জীবনে তিনি বহুবার হজ্বে যাওয়ার বিরল ভাগ্য লাভ করেছেন । কি অপার মহিমা । 

বিগত ( ১৯৮৯ ইং হইতে ) পবিত্র রমজানুল মোবারক মদীনা মোনাওয়ারায় ছরওয়ারে কায়েনাতের মসজিদে নববীতে ইতেকাফ করা শুরু করেন । প্রতি বছর মুসলমানের সব চাইতে বড় দুইটি ঈদ ( খুশির দিন আসে ) । আল্লাহর ওলী এই উভয় ঈদই আল্লাহর ঘর ও ছরওয়ারে দু’জাহানের রওজা মোবারকে কাটান । ইহা যে , কত বিরল ভাগ্য তা শুধু ছালেকই বুঝবেন ; ব্যখ্যা করার বিষয় নহে । ঈদ তো মানুষ আপনজনদের সাথে কাটায় ।

 হৃদয়ে গভীর আকুতি নিয়ে মাবুদের দরবারে কোন কিছু মঞ্জুর করাইতে পারলে এমনি করে বুঝি তার দরজা খুলে যায় । হযরতের পুত্র শাহসুফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা আবু আহমদ মুহম্মদ আইনুন্নায়ীম সাহেব স্থলাভিষিক্ত বর্তমানে ছালাম আবাদ ছিলছিলার প্রায় সমস্ত দায়িত্বই তার উপর অর্পিত । 

সকল পীর ভাই তাকে যেমন মহব্বত করেন তিনিও ঠিক সেই ভাবেই সকলকে আন্তরিকভাবে মহব্বত করেন । মাহফিলের হাজার হাজার মানুষের সমাগমের মাঝে শত কাজের ঝামেলায় অবিচল ধৈর্য ও নিষ্ঠা এবং পীর ভাইগণের প্রতি মহব্বতপূর্ণ আবেগাত্নক ব্যবহার দৃষ্টে ঐ সোনালী যুগের মুমিনগণের পারস্পরিক সৌহার্দময় ভালবাসার কথা স্মরণ করিয়ে দেয় ।

 মাহফিলের হাজার হাজার মানুষের খানা পাকানোর সময় মাঝে মধ্যে যখন শাহ সুফী আবু আহমদ ভাইজান কেবলাকে কোমরে গামছা আটিয়া পাকশালায় সুবৃহৎ ডেকচির পাশে দাড়িয়ে হাতল নাড়তে দেখা যায় তখন তার ফুলের মত চেহারা আগুনের আচে লাল হয়ে ওঠে , অবিচল নিষ্ঠার সহিত গলদঘর্ম হতে থাকে তখন দর্শক মাত্রেরই ভক্তি ও শ্রদ্ধায় মাথা আপনি নুয়ে আসে । 

একদিন এমনি এক হালতে আমার এক পীর ভাইজান বললেন যে , আপনি নিজে দাড়িয়ে সারাদিন এত পরিশ্রম করতেছেন কেন ? যদি হুকুম করেন শত শত মানুষ আপনার কাজটুকু করে দিয়ে কৃতার্থ বোধ করবে । তা করেন না কেন ? এই কথা শুনে তিনি হাসলেন । বললেন ভাইজান হয়তঃ আপনার কথা সত্যি । কিন্তু এই হাজার হাজার মানুষের মাঝে কত ওলী আল্লাহ , কুতুব আকতার ঘুরে বেড়াচ্ছে , কে কার খবর রাখে । তাদের খানা পিনার দায়িত্বটুকু কার কাছে ছেড়ে দিয়ে নিশ্চিন্ত হই বলেনতো । কাজেই নিজেই এইসব করি । 

তাতেই আমার তৃপ্তি । হয়তঃ এটাই একদিন আমার একমাত্র সম্বল হবে । শুনে এত আনন্দ পেলাম যে চোখে পানি এসে গেল । ভাবলাম আল্লাহর ওলীর সন্তান - ইহাতো তার মুখেই যথার্থ মানায় । আল্লাহ তাদের হায়াত দারাজ করুন ।


 কতিপয় কারামতঃ  কারামাতি আওলীয়ায়ি হাক্কুন । বাকিয়াতুন বায়াদা মাওতিহী । ওলী আল্লাহগণের কারামত সত্য । মৌতের পরেও তাদের কারামত জারি থাকে । হাদীস শরীফ তার প্রমাণ । কিন্তু তবু কারামত বেলায়াতের মূল কথা নয় । 

এমন হাজার হাজার ওলী , গাউস , কুতুব জগতে গুজরীয়া গেছেন যাদের হয়ত সারা জীবনে একটি কারামতও প্রকাশ পায় নাই । ইহা কামালিয়াতের লক্ষণ নয় । ইহা আল্লাহ পাকের পক্ষ হতে দান করা এমন এক মহব্বতানা ক্ষমতা যা ওলী আল্লাহগণ সারা জীবন সযতনে গোপন রাখার প্রয়াস পান । 

কারামতের ক্ষমতা যে ওলী আল্লাহ যত বেশী গোপন রাখতে পারছেন মূলতঃ তিনি বেলায়াতের তত উচ্চস্তরে রয়েছেন । তবু কেন , কোন দুর্বল মুহূর্তে এর কিছু কিছু প্রকাশ ঘটে পড়ে । সাধারণ মানুষ তা দেখে অভিভূত হয়ে পড়ে । কিন্তু আলেম উলামা ও উচ্চশ্রেণীর তরীকতপন্থীগণ এই দিকে নজর দেন না । 

অসাধারণ ও অস্বাভাবিক শক্তির প্রদর্শন করা ওলীদের শান নয় বা তাদের বৈশিষ্ট্যও নয় । ওলীগণ ছাড়া জাদুগীরদের পক্ষেও অনেক ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে হলেও এই সব সম্ভব । বেলায়েত সম্পূর্ণ ভিন্ন ব্যাপার । তবু ওলীগণ আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের খাস খলীফা হিসাবে অনেক সময় অনেক প্রয়োজন ও বিশেষ দুর্বল মুহূর্তে তাদের মধ্যে হতে এমন আশ্চার্য ঘটনার প্রকাশ হয়ে যায় যাতে সাধারণ মানুষ হতবাক হয়ে পড়ে । 

কখনো ইহা তাদের ইচ্ছায় ঘটে কখনো অনিচ্ছায় । এমতাবস্থায় বহুদিন পূর্বের একটি ঘটনা মনে পড়ে গেল । ঘটনাটি বর্তমান জামালপুর জেলার সদর থানার অন্তর্গত জয়রামপুর গ্রামে সুফী মোঃ জামাল উদ্দীন সাহেবের বাড়ীতে আমার মোর্শেদ কেবলা , শাহ সুফী আলহাজ্ব হযরত মাওলানা ছাইফুল মালেক ( রাহঃ) ছাহেবের ওয়াজ মাহফিল ছিল । 

হুজুর কেবলার সাথে ছিলেন তার এক বিশিষ্ট খলীফা , আলহাজ্ব হযরত মাওলানা ছাদুল্লাহ ছাহেব । মাগরীব নামাজের পর যথা সময়েই মাহফিল শুরু হলো মাহফিল চলাকালীন সময়ে হঠাৎ আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে জোরে বাতাস বইতে শুরু করল ইত্যবসরে ছাদুল্লাহ ভাইজান এসে হুজুর কেবলাকে বললো যে , আকাশের অবস্থা খুব খারাপ , ঝড় - তুফান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । 

মাহফিলের লোকজন অনেকেই চলে যাওয়ার উপক্রম , কি করবো , হুজুর কেবলা সব শুনে বললেন , আমাদের মাহফিল চলবে তুমি গিয়ে মাহফিলে বসো , তখন ছাদুল্লাহ ভাইজান মাহফিলে গিয়ে লোকজনদের বললেন আপনারা সকলেই বসেন । হুজুর কেবলা বলছেন আমাদের মাহফিল চলবে । 

রাত্রি ১২ টা পর্যন্ত অনেক লোকের উপস্থিতিতে হুজুর কেবলা মাহফিল শেষ করলেন । পরের দিন সকালে নান্দীনা বরকতী রাইজ মিলের মালিক মঞ্জুরুল হক সাহেব রাস্তার পার্শ্বে বসে লোকজনদের সাথে কথা বলতেছিলেন ঐ মহুর্তে বানারের ইব্রাহিম ভাইজান নান্দিনা যাওয়ার পথে মঞ্জু ভাইকে বললেন জয়রামপুর জামাল ভাইয়ের বাড়ীতে হুজুর কেবলার মাহফিলে গেলেননা কেন , তখন মঞ্জু ভাই বললো , কেমনে যার বিদ্যুৎ ছিলনা , ঝড় - তুফানের মধ্যে কেমনে যাব ।

 তখন ইব্রাহিম ভাই বললেন কে বলছে বিদ্যুৎ ছিলনা প্রায় সমস্ত রাত্রিই তো বিদ্যুৎ ছিল । এই আলোচনা চলাকালীন সময়ে নান্দিনা থেকে আরি সাহেব আসতেছিলেন । মঞ্জু ভাই আরি সাহেবকে ডাক দিলেন , আরি সাহেব কাছে আসলে তাকে একটি টা চেয়ারে বসতে দিলেন এবং জিজ্ঞাস করলেন গত রাত্রে বিদ্যুৎ এর লাইন বন্ধ ছিল কি ? তখন আরি সাহেব বললেন জি বন্ধ ছিল । 

আরি সাহেবের সামনে ইব্রাহীম ভাইকে বললেন আপনি কি বলছেন আরি সাহেব কি তা না হলে মিথ্যা কথা বলছে , মাহফিলে যারা উপস্থিত ছিল ইত্যবসরে আরও চিনি কয়েকজন সেখানে এসে হাজির হয়ে গেল এবং প্রত্যক্ষ দর্শীরা সকলেই পালা বললো মাহফিলে সর্বক্ষণ বিদ্যুৎ ছিল । এমনি কি ঝড় - তুফানো ছিলনা ।

 হুজুর খুব সুন্দর ভাবেই মাহফিল করেছেন । ঘটনা ঠিক আর কোথাও বিদ্যুৎ জানএর আলো ছিল না । তখন আরি সাহেব অভাক হয়ে গেলেন এবং বললেন যে , আমি নিজে হাতে মেইন সুইচ বন্ধ করে ঘরে তালা বদ্ধ করেছি । ওলীগণের জীবনের সবচাইতে বড় কারামত তাদের জীবনের কাজ আমল ও বাক্য হুজুর পাক ( ছাঃ ) এর হুবহু অনুকরন ও অনুসরণ হবে ।

 ইহা সব । চাইতে বড় ও অসাধারণ কারামত । যার সাথে কোন কিছুরই তুলনা হয় না । কেননা এই পর্যায়ে যিনি যত উন্নীত হতে পেরেছেন নিঃসন্দেহে তিনি বেলায়েতের দিক দিয়েও তত বেশী দরজাপ্রাপ্ত হয়েছেন । এবং ইহাই বেলায়াতের এক মাত্র দলিল । যার মাঝে হুজুর পাকের যে পরিমান অনুসরণ ও অনুকরণ এবং  ) যতটুকু সুন্নতের পায়রবী আছে বেলায়েতের ক্ষেত্রে তিনি ততটুকুই মর্যাদার অধিকারী । 

তবে এই মাপকাঠিতে ওজন করার ক্ষমতা উচ্চ শ্রেণীর বিচক্ষণ । হক্কানী আলেম ও আমলদারীদেরই কেবল থাকে । হযরত শায়খের অতি ঘনিষ্ঠ ও নগন্ন একজন মুরীদ হিসাবে তাঁর ক্ষেত্রে বলতে পারি যে , উপরোক্ত নিরিখে বর্তমান যুগে তার ন্যায় একজন কামেল ওলী বিরল । হুজুর পাক জীবনের শ্রেষ্ঠ কারামত ।

 তা ( ছাঃ ) এর সুন্নতের হুবহু অনুসরণের ক্ষেত্রে তিনি আপোষহীন । ইহাই তার জীবনের শ্রেষ্ঠ কারামত নোয়াখালি জেলার অন্তর্গত হাতিয়া উপজেলায় প্রতি বছর হুজুর কেবলার বেশ কিছু দিন বাৎসরিক মাহফিলের প্রগ্রাম হয় । হুজুর প্রতিদিন ওয়াজ মাহফিল শেষ করে দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার বিশ্রামাগারে এসে কিছু সময় বিশ্রাম নেন । 

এমনি অবস্থায় কিছু দিন কেটে যাওয়ার পর , এক দিন দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক জনাব মোঃ রফিকুল ইসলাম ভূঁইয়া হুজুরকে বললেন যে , হুজুর বড় একটা সমস্যা দেখা দিয়েছে । হুজুর একটু মুচকি হেসে বললেন কি সমস্যা বল । তখন তিনি বললেন , বাগানে ফুলের গাছ , ফলের গাছ , কাঠ গাছ ও ভিবিন্ন ধরণের শাক - সবজী গুলো প্রায় মারা যাওয়ার উপক্রম , শ্যালো মেশিনের পানি পর্যাপ্ত পরিমাণ হচ্ছে না । 

হুজুর তা শুনে উপরের দিকে চেয়ে কি জানি ভাবলেন , আল্লাহর কি অপার মহীমা দেখা গেল কিছুক্ষণের মধ্যে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন করে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল । বৃষ্টি শেষে পরিচালক সহ অনেকেই বের হয়ে ঘুরাফেরা করে দেখতে লাগল । কি আশ্চ্যর্য দ্বীপ উন্নয়ন সংস্থার বাইরে এক ফুটা বৃষ্টিও হয় নাই । উপস্থিত সকলেই মহান রাব্বুল আলামিনের দরবারে শুকরিয়া আদায় করলেন । হুজুর এ কথা শুনে শুধু এতটুকু বললেন আল্লাহ ইচ্ছা করলে সবই করতে পারেন । 


হাতিয়ার আরও একটি ঘটনা : 

সেই বার হাতিয়ায় ভয়াবহ হ্যারিকেন ছোবল দিয়ে ছিল । বন্যার পানি বাড়ী ঘর ডুবিয়ে হু হু করে বহে চললো । সকলেই কোন রকমে প্রাণখানা শুধু লয়ে আশ্রয় শিবিরে উঠল । আবুল খায়ের তার এক পুত্রকে তাড়াহুড়ার মাঝে অশ্রয় শিবিরে উঠবারকালে খুজে পেলেন না । 

অথই পানি চারদিক প্লাবিত করে দুর্বার গতিতে বহে চলছে , সাধ্য কি যে এর মাঝে বের হয়ে কে কাকে খুজে । মা - বাবার মন পুত্র শোকে হাহাকার করে উঠল । মার কলিজা ফাটা আক্ষেপ ধ্বনীতে পিতা আরও ব্যাকুল হয়ে উঠল । কিন্তু উপায় নেই । ছেলেটির জন্মের কয়েকদিন পরেই হাতিয়ায় হুজুর কেবলার ছফর ছিল । পিতা তার শিশু পুত্রটিকে হুজুরের কোলে দিলেন । 

হুজুর ছেলেটিকে আদর করে চুমা দিলেন । এবং তার জন্য দোয়া করলেন । শুকাতোর মাতা - পিতার মনে কেন জানি ঐ সব ঘটনা বারে বারে ভেসে উঠতে লাগলো । এমনি করে তিন দিন পার হয়ে গেল , আল্লাহর কি অপার মহীমা পানি চলে গেলে শিশু পুত্রটি বাড়ীতে চলে আসল । পাগলিনী মা চিৎকার করে পুত্রের দিকে ছুটে গেলেন । পুত্র মা মা করে মার কোলে ঝাপিয়ে পড়লো । 

মা বললো বাবা তুমি ছিলে কোথায় ? সে বললো পীর দাদাজান আমায় আদর করে কোলে রেখেছিলেন । মোহনগঞ্জ এলাকায় পালগাও গ্রামে এক মাহফিলে হুজুর কেবলার দাওয়াত । সঙ্গে বেশ কয়েকজন মুরীদসহ রওনা হলেন । যারা মাহফিলের আয়োজন করেছিলেন তারা পীর সাহেবকে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে এলাকার একটা পাগলা ঘোড়া লয়ে পথিমধ্যে অভ্যর্থনার জন্য দাড়িয়ে রইল ।

 উদ্দেশ্য হযরতকে উক্ত ঘোড়ায় ছওয়ার হওয়ার আবেদন জানিয়ে পরীক্ষা করবে । ঘোড়াটি এতই পাগলা ছিল যে কেহ তার উপর ছওয়ার হলে নাচিয়া কুদিয়া ছওয়ার ফেলে দিয়ে নাজেহাল কান্ড করে ফেলত । যথা সময়ে হুজুর সঙ্গী সাথীসহ তথায় পৌছলে তারা হুজুরকে সালাম করে ছওয়ারী হাজির করে বাকি পথ তাতে চড়ে যাওয়ার আবদার করল । 

ঘটনাটি ছিল অতি স্বাভাবিক । সম্মানিত মেহমানকে এগিয়ে নিতে এসে এই রকম অভ্যর্থনা জানাবে এইতো নিয়ম । হুজুর তার স্বভাব সুলভ মৃদু হেসে বললেন , আমি তো ঘোড়ায় চড়ি না , অভ্যাসও নেই । কিন্তু তারা নাছোড় বান্দার ন্যায় বার বার অনুরোধ করতে লাগল । হুজুর মৃদু হেসে বিসমিল্লাহ বলে ঘোড়ার লাগাম হাতে নিলেন এবং ঘোড়ার পিঠে হাত রাখলেন । 

আশ্চর্য ঘোড়াটি সুবোধ হয়ে দাড়িয়ে রইল । হুজুর ঘোড়ার উপর ছওয়ার হলেন । ঘোড়াটি শান্তভাবে চলতে লাগল । লোকজন হত ভাগ হয়ে সেই দৃশ্য দেখতে লাগল । লজ্জায় অনুশোচণায় তাদের হৃদয় ক্ষত - বিক্ষত হতে লাগল । পরে এই ঘটনা ও বেয়াদবীর জন্য হুজুরের খেদমতে মাফ চেয়ে দলে দলে বায়াত গ্রহণ করলেন । হুজুর মাফ করে দিয়ে সকলের জন্য প্রাণ খুলে দোওয়া করলেন ।

 যারা আল্লাহর ওলা এই হলো তাদের শান । হুজুর কেবলা ময়মনসিংহে কোন এক এলাকায় মাহফিল শেষ করে চট্টগ্রাম । যাবেন । সঙ্গীদেরকে বললেন , তোমরা টিকিট কেটে গাড়িতে বসিও , আমি | আসতেছি । সকলেই টিকিট কেটে অপেক্ষা করতেছেন । নির্দিষ্ট সময়ে | গাড়ি প্লাটফর্মে আসলো । 

সকলেই হুকুম অনুযায়ী গাড়িতে উঠে বসলেন । কিন্তু হুজুর আসতেছেন না । গাড়ী ছাড়ার সময় হয়ে গেল , সকলেই চিন্তায় পড়ে গেলেন , গার্ড হুইসেল বাজিয়ে নিশাণ ওড়িয়ে গাড়ী ছাড়ার সংকেত দিল । ড্রাইভার হুইসেল বাজালেন । গাড়ী চলেেছ না । ড্রাইভার স্টার্ট দেয় । কিন্তু গাড়ী অনড় । মেকানিজম পরীক্ষা করে আবার স্টার্ট দেয় । বিকট শব্দ হয় । 

কিন্তু গাড়ী সেখানেই দাড়িয়ে রইল । হুজুরের সঙ্গীগণ বার বার পথের দিকে উৎকণ্ঠচিত্তে তাকান । প্রায় ঘন্টা খানেক কেটে যাবার পর হঠাৎ সকলেই দেখলেন হুজুর কেবলা তড়িঘরি করে প্লাটফর্মে ঢুকতেছেন । হাত নাড়িয়া সকলেই নিজেদের অবস্থান জানিয়ে দিলেন ।

 কেউ গাড়ী হতে নেমে দাড়ালেন । নিকটে এসে হুজুর দমক দিলেন । নেমেছ কেন , শিগ্র ওঠ । হুজুর নিজেও ওঠে বসলেন । আল্লাহর কি অপার মহীমা গাড়ীও চলতে শরু করলো । সঙ্গীগণ সকলেই হতভাগ হয়ে পরস্পর মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলেন । হুজুর কেবলা নির্বিকার । এমনি কত ঘটনা তার জীবনে ছড়িয়ে আছে । হুজুর কেবলা ইংরেজী ১৯৫৪ সন থেকে শুরু করে এ যাবত বহুবার হজ্ব করেছেন । 

একবারের একটি ঘটনা । হুজুর হজ্বে যাবেন । নির্ধারিত ফ্লাইটের দিনে বহু মুরীদান বিমান বন্দরে গেলেন হুজুরের বিদায়ী দোওয়া নিতে । সকলেই বন্দরে অপেক্ষা করছেন । হুজুরের আসতে বিলম্ব হচ্ছে । সকলে চিন্তিত । ইতিমধ্যে নির্ধারিত সময় হয়ে গেল । সকল যাত্রীরা বিমানে উঠে গেল । অবশেষে বিমান ছাড়বার সংকেত হলো এবং রানওয়েতে বিমান ছুটল । 

নিরূপায় হয়ে সকলেই ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন । ইতিমধ্যে কেউ কেউ চলেও গেলেন । ১০/১৫ মিনিট পর হঠাৎ দেখা গেল হুজুর কেবলা এয়ারপোর্টে এসে হাজির । সকলে গিয়ে হুজুরের সাথে মোলাকাত করলেন এবং নির্ধারিত ফ্লাইট মিস হওয়ায় আফসোস করতে লাগলেন । হুজুর মৃদু হাসলেন । বললেন , আফসোসের কিছু নাই । চল , সবাই এক জায়গায় বসি । 

সকলেই বসলেন টার্মিনালের এক জায়গায় । বসে টুকরো আলাপ আলোচনা চললো , হঠাৎ সকলেই অবাক হয়ে ঘোষনা শুনলেন জেদ্দার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বিমানে গুরুতর যান্ত্রীক গোলযোগের কারণে বিমান ছাড়তে দেরি হবে । সকল যাত্রী নেমে আসলেন । ইঞ্জিনিয়াররা ছুটে গেলেন । 

ঘন্টা খানেক পর বিমান ঠিক করা হলো । আবার যাত্রীরা বিমানে চড়লেন । হুজুর কেবলা টিকিট দেখিয়ে ভিতরে ঢুকলেন এবং বিমানে চড়লেন । সব ঠিক , বিমান চেকআপ করলো । সকলে অভাক হয়ে চেয়ে রইলেন । “ হে আল্লাহর মহব্বতের বান্দারা , তোমরা ভয় করো না । আল্লাহ আমাদের সাথে আছেন । ” আল্লার ওলীগণের জীবনে বারে বারে তা আমরা দেখি । 

হুজুর কেবলা জামালপুরের নুরুন্দী নামক জায়গায় এক মাহফিলে গেছেন । সকলেই হুজুর কেবলার বয়ান শুনবার আগ্রহে বসে আছেন । উদ্যোক্তাদের কি জানি কি অদ্ভুত খেয়াল জাগল । বাজারের নষ্ট একটি মাইক এবং সামান্য তেল দিয়ে একটি হেজাগ জ্বালিয়ে রাখল । উদ্দেশ্য হুজুরকে ইচ্ছাকৃত ভাবে বিব্রত করা । 

আল্লাহর ওলী মাহফিলে পৌছিলেন । বরাবরের অভ্যাসমত সোজা স্টেজে ওঠে গেলেন । ওয়াজ শুরু করলেন । নষ্ট মাইক বিরতীহীন ভাবে বেজে চললো । হুজুর তিন ঘন্টা ওয়াজ করলেন । নামে মাত্র তেলের হেজাগ পূর্ণ তেজে চলতে থাকল । আল্লাহর ওলীর সামনে কোন বাঁধাই আর বাঁধা রইলনা । 

হতবাক উদ্যেক্তারা হুজুরের খেদমতে অশ্রুপূর্ণ নয়নে মাফ চাইল । দয়াদ্রচিত্তে হুজুর সকলের জন্য দোয়া করলেন । হায়রে অবুঝ মানুষ , যুগে যুগে কত নবীকে , কত আল্লার ওলীকে কত ভাবেই না বিব্রত করার চেষ্টা করেছে । বিনিময়ে নিজেরাই আখেরতক অনুশোচনা করেছে । 


 ছালাম আবাদ শরীফে হুজুর কেবলার এতিম খানায় আব্দুল মোতালিব নামে এক প্রতিবন্ধী আসলো , তার পা দুটি একেবারে বাঁকা খুড়িয়ে খুড়িয়ে বহু কষ্টে সে পথ চলে । গায়ের রং শ্যামলা , গোলগাল মায়াবরা চেহারা , গলার আওয়াজ বড় মিষ্টি , হুজুর তাকে এতিম খানায় স্থান দিলেন , এবং লেখা পড়ার সুব্যবস্থা করে দিলেন , মাঝে মাঝে গলার সেই মধুর কণ্ঠে নাতে রাসূল ও ইসলামী গজল গেয়ে এতিম খানা মুখরিত করে তুলে , হুজুর তাকে বড় আদর করেন এবং দোওয়া করেন । 

আল্লার কি অসীম দয়া । অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তার লেংড়া পা ভাল হয়ে গেল , মানুষ অভাক হয়ে তাকে দেখতে আসে , তার মনে কি শান্তি । মধুর আওয়াজে ওয়াজ করে । মানুষ তাক লেগে তার ওয়াজ শুনে । হুজুর কেবলার এতিম খানায় ইলেকট্রিক মেকানিজমের কাজ শিখে , মাইক চালায় ।

 এই করে আজ সে বয়স্ক , তাই তার ভবিষ্যত সাংসারিক জীবনের কথা চিন্তা করে এতিম খানার পক্ষ হতে ঢাকায় এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীতে চাকরীর ব্যবস্থা করে দিছেন । সে ছেলেটি পরিবারের , সমাজের , তথা দেশের একটি বোঝা সরুপ ছিল , সেই প্রতিবন্ধী , অভিশপ্ত জীবন থেকে মুক্তি পেয়ে কর্মক্ষম এক পুরুষ । 

ওলীর সংশ্রব তাকে এমনি করে চতুর্দিক পূর্ণ করে দিল।শত রংপুর জেলায় হুজুর কেবলা এক মাহফিলে গেছেন , মাহফিল শেষে এক লেংড়া এসে হুজুরের খেদমতে হাজির । হুজুর কেবলার দৃষ্টি আকর্ষণ করে অনুনয় ও বিনয়ের সাথে কাঁদ কাঁদ স্বরে দোওয়া চাইলেন , হুজুর কি জানি একটু চিন্তা করলেন , এবং কাছে বসিয়ে ফু দিলেন , দোওয়া করলেন , লোকটি বাড়ী চলে গেল ।

 আল্লাহর কি দয়া ও অপার মহীমা রাত্রে ঘুমের পরে সকালে ওঠে দেখে যে তার পা ভাল হয়ে গেছে , তাকে দেখার জন্য অনেক লোক উপস্থিত । সাধারণত এই সব কথা ছড়ায় বেশী । মাহফিল শেষ করে হুজুর কেবলার এক মুরীদ তার ও টেলিফোন বিভাগের এক কর্মকর্তা আবুল হোসেনের বাসায় রাত্রী যাপন করলেন ।

 ভোরে হুজুর কেবলা চলে আসবেন , খবর পেয়ে অনেক লেংড়া ও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা  নিয়ে হুজুরের সামনে এসে হাজির । সকলেই হুজুরের কাছে দোওয়া চায় , আল্লার ওলী সকলের জন্যই দোওয়া করলেন । গাড়ীতে বসা ছিলেন সামনে যারা আসলো তাদেরকে ফু দিলেন । আল্লার কি অপার মহীমা , কিছু দিনের মধ্যে সকলেই ভাল হয়ে গেল । কি শান্তি কি আনন্দ তাদের মাঝে । এই খবর চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো । 

কি আশ্চর্য্য্য ছালাম আবাদ শরীফে পরের মাহফিলে বহু প্রতিবন্ধী এসে হাজির । যে দিকে তাকানো যায় সে দিকেই দুই চারটা লেংড়া আছেই । ঘটনা দেখে এইবার হুজুর কেবলা বিরক্ত হলেন । মনক্ষুন্ন হয়ে বললেন যে , আমি হেদায়েতের কাজ করি , চিকিৎসকের নয় । এর পর থেকে আসা বন্ধ হলো ।

 এমন ছোট খাটো বহু ঘটনা আমার জীবনেও উপলব্দি করেছি । কিন্তু বিশেষ অনুমতি ছাড়া লিপিবদ্ধ করতে সাহস পায়নি , আমার হাজার হাজার পীর ভাই , যারা হুজুর কেবলার অতি নিকটে থাকেন তাদের কাছেও এমন শত শত ঘটনা সংরক্ষিত আছে , আমাকে লিপিবদ্ধ করতে বলেন । তবু বেয়াদবীর পাশ কাটিয়ে মাত্র দু'একটি ঘটনা উল্লেখ করলাম ।

 তারিখটি ঠিক মনে নেই সম্ভবতঃ ১৯৯১ ইং সনে নালিতা বাড়ীতে হুজুর কেবলার মাহফিল । আমাকে বললেন মাহফিলের খোজ খবর নিতে । কয়েক দিন পূর্বে আমি একটি পুরাতন মটরসাইকেল ক্রয় করেছি । কোন মতে চালাতে পারি । কিন্তু অন্য কোন অভিজ্ঞতা নেই , যেমন তেলের পরিমাণ , রাস্তার মাপ , প্লাগ পরিস্কার ইত্যাদি । সেই গাড়ীটি নিয়েই নালিতা বাড়ীতে চলছি , কয় রুটের কাছাকাছি গিয়ে হঠাৎ করে চলা বন্ধ হয়ে গেল , অনেক চেষ্টা করলাম ।

 কিন্তু কোনই কাজ হলো না , আমার এই অবস্থা দেখে এক মটরসাইকেল ওয়ালা ভদ্রলোক গাড়ী থেকে নেমে আমার কাছে আসলেন । সমস্যার কথা জিজ্ঞাসা করলেন , আমি কোন কিছু বলতে না পারায় তিনি নিজেই টুকি টাকি সমস্যাগুলো দেখলেন , প্লাগ পরিস্কার করে স্টার্ট ধরানোর চেষ্টা করলেন , কিন্তু পারলেন না , তখন পেট্টোল চেক করে বললেন যে আপনার গাড়ীর তেল শেষ হয়ে গেছে । পরে গাড়ীটি কাত করে স্টার্ট ধরিয়ে দিয়ে বললেন সামনে তিনানী বাজারে গিয়ে তেলের ব্যাবস্থা করেন । 

কোন রকম ভয়ে ভয়ে গিয়ে তিনানী বাজারে গিয়ে জিজ্ঞাস করলাম , কোন ঘরেই তেল নাই । চিন্তায় কেমন জানি হয়ে গেলাম । যদিও বহু দিন পূর্বে মুরীদ হয়েছি , কিন্তু দুদোল্যমান আত্মবিশ্বাস কম , কিন্তু তখনো গাড়ীর স্টার্ট বন্ধ হয় নাই , আল্লাহকে হাজির নাজির জেনে আমার হুজুর কেবলাকে স্মরণ করতে লাগলাম , এবং মনে মনে দোওয়া চাইতে লাগলাম ।

 আল্লাহর কি অপার মহীমা নালিতা বাড়ী থেকে নকলা হয়ে শেরপুর এসে তেলের পাম্পে গিয়ে তেল ভরে নিলাম , এবং পরের দিন মাহফিলের খবর জানানোর জন্য হুজুর কেবলার কাছে গেলাম , আমাকে দেখেই একটু মুচকি হেঁসে বললেন , রাজ্জাক কি অবস্থা আরও বললেন বাবা আল্লাহ কাউকে ঠেকায় না ।

 আল্লাহ ইচ্ছা করলে সব কিছু করতে পারেন । হুজুর ময়মনসিংহ ষ্টেশন মসজিদে মাহফিল শেষ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম ভাইজানের বাসায় গিয়ে কতিপয় মুরীদ সাথে নিয়ে খোশ আলাপ করছিলেন । হঠাৎ আবুল হাশেম ভাই বললেন , হুজুর আমার কোন সন্তানাদী নাই , বিবি সাহেবা খুবই চিন্তাযুক্ত । ওলীদের দোওয়া আল্লাহ কবুল করেন , তাই একটি সন্তানের জন্য আপনার কাছে দোওয়া প্রার্থী । 

হুজুর তা শুনে কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটু মুচকি হেসে বললেন তোমাদের মধ্যে কে আছ , হাশেমকে একটি সন্তান দান করবে । সামনেই বসা ছিলেন হুজুরের এক বিশিষ্ট খলিফা , হযরত মাওলানা মোঃ জমশেদ আলী সাহেব , তিনি বললেন , হুজুর আমার ভাগ্যের সন্তান আমি তাকে দান করবো , তখন হুজুর শুকরিয়া আদায় করে হাশেম সাহেবকে লক্ষ্য করে বললেন তোমরা সন্তানের মা - বাবা হবে । 

আল্লাহর অশেষ মেহের বাণীতে সেই বছরই একটি মেয়ে সন্তান জন্ম গ্রহণ করে । হুজুর খবর শুনে বললেন যে , আল্লাহ ইচ্ছা করলে সবই করতে পারেন । এমনি অসংখ্য ঘটনা তার জীবনে রয়েছে , যদি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুযোগ করে দেন । তাহলে পরবর্তীতে লিপিবদ্ধ করার চেষ্টা করব।


বিঃদ্রঃ,, তরীকায়ে আহমদীয়া,, কিতাব থেকে হুবহু কপি করা হয়েছে। 



2 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post