চার মযহাবের মূল্যায়ন: লা-মযহাবী ফিতনা

 (৬ষ্ঠ পর্ব)

মূল: ড: আবদাল-হাকিম মুরাদ (যুক্তরাজ্য)

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

চার মযহাবের মূল্যায়ন: লা-মযহাবী ফিতনা (৬ষ্ঠ পর্ব)


Dr. Abdal-Hakim Murad's online article

'Understanding the Four Madhhabs: The

problem with anti-madhhabism' - episode 6



বিঃদ্রঃ ৫ম পর্বের পড় থেকে। 


ইসলামের মৌলিক শাস্ত্র যে শুধু ব্যাখ্যা-ই করা যায়, সে বিষয়ে সচেতন হয়ে ইসলামী জ্ঞান বিশারদবৃন্দ জটিল দলিল-

আদিল্লা পরখ কালে কিছু প্রাথমিক তত্ত্বগত পরীক্ষা ও সমাধান-পদ্ধতির সিরিজ প্রয়োগ করতেন। পূর্ববর্তী যুগের উলামাবৃন্দ যে পদ্ধতি প্রবর্তন করেছিলেন তা হলো, দুটো কুরআন মজীদের আয়াত বা দুটো হাদীস শরীফ যদি পরস্পরবিরোধী প্রতীয়মান হতো, তবে উলেমাবৃন্দ সেগুলোর এবারত/লিপির ভাষা বিশ্লেষণ করতেন, যাতে আরবী থেকে ব্যাখ্যা করার সময় কোনো ভুলের কারণে এই পরস্পর বিরোধিতার উৎপত্তি হয়েছে কিনা তা খুঁজে বের করা যায়।

এই পদ্ধতিতে সমস্যার সমাধান করা না গেলে উলেমাবৃন্দ শাস্ত্রলিপিগত, আইনী ও ইতিহাস রচনাগত এই তিনটি দিকের সমন্বিত কৌশলের ভিত্তিতে নির্ধারণ করতে চেষ্টা করতেন ওই দুটো দলিলের মধ্যে কোনোটি ’তাখসিস’-এর আওতাভুক্ত কিনা; অর্থাৎ, সেটি কোনো বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে হওয়ায় অপর দলিলটিতে বিবৃত অধিকতর সার্বিক নীতির সুনির্দিষ্ট ব্যতিক্রম কিনা। ফকীহবৃন্দকে বিভিন্ন রওয়ায়াত (বর্ণনা)-এর শাস্ত্রগত নির্ভরযোগ্যতাও নির্ণয় করতে হতো।

তা এই নীতির ভিত্তিতে হতো যে একটি এসনাদ- বিশিষ্ট (আহাদ জাতীয়) বর্ণনাসম্বলিত হাদীসকে আল-কুরআনের যে কোনো আয়াত নাকচ করে দিতে সক্ষম, যেমনিভাবে তা নাকচ

করতে সক্ষম অনেকগুলো এসনাদ-বিশিষ্ট কোনো হাদীস (মোতাওয়াতের/মাশহুর জাতীয়)। এই সকল পদ্ধতি প্রয়োগের পরও যদি ফকীহবৃন্দ তাতে সমস্যাটি বিদ্যমান দেখতে পেতেন,

তাহলে দুটো দলিলের একটির দ্বারা অপরটি ’নাসখ’ (রহিত)

হয়েছে কিনা তার সম্ভাব্যতা তাঁদেরকে যাচাই করে দেখতে হতো। ’নাসখ’-এর এই নীতি এমন একটি উদাহরণ যা দ্বারা প্রতিভাত হয় সুন্নী উলেমাবৃন্দ `তায়ারুদ আল-আদিল্লাহ’-এর মতো সূক্ষ্ম ও নাজুক বিষয়গুলোতে কীভাবে শাস্ত্রগত

নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে সমাধান খুঁজতেন; আর তাঁদের ওই পদ্ধতি অনেক আগেই বহুবার মহানবী (দ:) কর্তৃক তাঁর

হায়াতে জিন্দেগীর সময় স্বীকৃত হয়েছিল। সাহাবায়ে কেরাম (রা:) ‘এজমা’ তথা ঐকমত্যের ভিত্তিতে জানতেন যে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর রেসালতের প্রথম বছরগুলোতে তিনি যখন তাঁদেরকে শিক্ষা দিচ্ছিলেন এবং তাঁদের যত্ন নিচ্ছিলেন, আর তাঁদেরকে অংশীবাদের বিভ্রান্তি থেকে আল্লাহর একত্ব বাদের ঐকান্তিক ও করুণাময় পথে সরিয়ে নিয়ে আসছিলেন, তখন তাঁর ধর্মীয় শিক্ষা ও বাণী তাঁদের (জাগতিক ও

পারলৌকিক) উন্নতির সাথে যেন খাপ খায় ঠিক তেমনি ঐশীভাবে ঢেলে সাজানো হচ্ছিল। এটির সবচেয়ে ভালভাবে জ্ঞাত নজির হলো ধাপে ধাপে মদ নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়াটি,

যা প্রথম দিককার একটি কুরআনের আয়াতে অনুৎসাহিত করা হয়; অতঃপর এর নিন্দা করা হয়, এবং সবশেষে নিষিদ্ধ করা হয়।ইসলামের আরও মৌলিক নীতির সাথে সম্পৃক্ত

নামাযের বিধানটিও এর আরেকটি উদাহরণ। প্রাথমিক সময়কার উম্মতের প্রতি দৈনিক দুই ওয়াক্ত নামায পড়ার

বাধ্যবাধকতা থাকলেও মে’রাজ রাতে এই বিধান দৈনিক পাঁচ ওয়াক্তে উন্নীত করা হয়। মো’তাহ (সাময়িক) বিয়েকেও ইসলামের সূচনালগ্নে অনুমতি দেয়া হয়, কিন্তু সামাজিক

পরিস্থিতির উন্নতি, নারীর প্রতি সম্মান বৃদ্ধি ও নৈতিকতার শেকড় অন্তরের গভীরে গেঢ়ে বসার পর তাও পরবর্তীকালে নিষিদ্ধ করা হয় [এ প্রথা ও মদ্যপানের রেওয়াজ পূর্ববর্তী আরবীয় ঐতিহ্য ছিল - অনুবাদক]। এ রকম আরও অনেক নজির রয়েছে যার অধিকাংশ ঘটনা হিজরতের পরে ঘটেছিল, যখন এই অল্পবয়সী উম্মতের পরিস্থিতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটে।


চলবে ---------।

৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন 


2 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post