চার মযহাবের মূল্যায়ন: লা-মযহাবী ফিতনা

 (৪র্থ পর্ব)

মূল: ড: আবদাল-হাকিম মুরাদ (যুক্তরাজ্য)

অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

চার মযহাবের মূল্যায়ন: লা-মযহাবী ফিতনা (৪র্থ পর্ব)


Understanding the Four Madhhabs: The

problem with anti-madhhabism -

 4th episode


বিঃদ্রঃ ৩ য় পর্বের পড় থেকে। 

ইসলামের প্রাথমিক যুগে অপর যে ভিন্ন মতাবলম্বী দলের আবির্ভাব ঘটে, তা হলো খারেজী সম্প্রদায় - যারা আক্ষরিক

অর্থেই ’খারিজ’ বা ধর্মত্যাগী; তারা এই খেতাবে ভূষিত, কারণ তারা খলীফা হযরত আলী (ক:)-এর সৈন্যবাহিনী ত্যাগ করেছিল যখনই ‍তিনি আমীরে মোয়াবিয়া (রা:)-এর সাথে তাঁর বিরোধ সালিশে নিষ্পত্তি করতে সম্মত হন। “ইনিল হুকমু ইল্লা লিল্লাহি” (আল্লাহর আদেশ ছাড়া কোনো হুকুম নেই) - কুরআন মজীদের এই আয়াতটি প্রদর্শন করে তারা হযরত আলী (ক:) ও তাঁর সৈন্যবাহিনীর সাথে তুমুল যুদ্ধবিগ্রহে জড়িয়ে পড়ে; তাঁর সৈন্যবাহিনীতে রাসূলুল্লাহ (দ:)-এর নেতৃস্থানীয় সাহাবী (রা:)-বৃন্দও ছিলেন। অবশেষে হযরত আলী (ক:) নাহরাওয়ান- এর যুদ্ধে খারেজীদেরকে পরাস্ত করেন। এই যুদ্ধে দশ হাজারের মতো খারেজী মারা যায়। প্রথম দিককার খারেজীরা মারা গেলেও খারেজী মতবাদ নিজে টিকে থাকে। এই মতবাদ

নিজেকে সূত্রবদ্ধ করার সময় শিয়া মতবাদের ঠিক উল্টো রূপ পরিগ্রহ করে, ফলে উত্তরাধিকারসূত্ রে বা ভক্তি-শ্রদ্ধার বদৌলতে প্রাপ্ত নেতৃত্বের যে কোনো ধারণাকে এটি প্রত্যাখ্যান

করে এবং একমাত্র পুণ্য কর্মের ভিত্তিতেই ঈমানদারদের সমাজের নেতৃত্ব বাছাইয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করে। অত্যন্ত মৌলিক মাপকাঠি দ্বারা এটি নিরূপণ করা হয়: প্রথম দিককার খারেজীরা আমল পালনে তাদের কঠোর নীতির কারণে পরিচিত ছিল; আর এই কঠোর মতবাদের দৃষ্টিতে যে মুসলমান- ব্যক্তি বড় পাপ (গুনাহে কবীরাহ) সংঘটন করেন,

তিনি অবিশ্বাসী (কাফের) হয়ে যান। ‘তাকফির’ তথা অবিশ্বাসের এই ধারণাটি খুজেস্তানের প্রত্যন্ত পার্বত্য জেলা গুলোতে তাঁবু ফেলে থাকা খারেজী দলগুলোকে উমাইয়া শাসনের প্রতি আনুগত্য স্বীকারকারী মুসলমানদের বসতি আক্রমণের অনুমতি এনে দেয়। এই সব অভিযানে অ-

খারেজীদেরকে নিয়মিতভাবে হত্যা করা হতো, যার দরুণ আল-হাজ্জাজ ইবনে ইউসূফের মতো প্রতাপশালী উমাইয়া শাসকবর্গ নির্মম দমনমূলক পাল্টা ব্যবস্থা নিতেন। তবে খারেজীদের উদ্দেশ্যহীন কর্মকাণ্ড হতাশাব্যঞ্জক হওয়া সত্ত্বেও

আক্রমণগুলো চলতে থাকে। খলীফা হযরত আলী (ক:) শহীদ হন নাহরাওয়ানের যুদ্ধ থেকে বেঁচে ফিরে আসা ইবনে মুলজাম নামের এক খারেজীর হাতে; অপর দিকে, মুহাদ্দীস ইমাম

নাসাঈ (রহ:), ‘সুনান’ শীর্ষক হাদীসগ্রন্থের যিনি প্রণেতা, তাঁকে ৩০৩ হিজরী/৯১৫ খৃষ্টাব্দ সালে দামেশকে খারেজী উগ্রবাদীরা একইভাবে শহীদ করে। শিয়া মতবাদের মতো খারেজীবাদও ইরাক ও মধ্য এশিয়ায় এবং সময়ে সময়ে অন্য এলাকায়ও অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে, ঠিক ইসলামের চতুর্থ ও পঞ্চম শতকের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। এই সময়ে এসেই একটি ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে। সুন্নী মতাদর্শ একটি বিস্তারিত ব্যবস্থা হিসেবে ঐক্যবদ্ধ অবস্থায় আবির্ভূত হয়, যা এই সময় সমাধানমূলক এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ উলেমাবৃন্দের পথ ও মতের এমন উজ্জ্বল প্রতিফলনকারী ছিল যে প্রতিদ্বন্দ্বী আন্দোলনগুলোর আকর্ষণ ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়।


চলবে--------।

৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন 



2 Comments

  1. এভাবে চালিয়ে যান

    ReplyDelete
  2. প্রতিদিন একটা করে পর্ব দিবেন। ধন্যবাদ

    ReplyDelete

Post a Comment

Previous Post Next Post