প্রসঙ্গ: শবে বরাত : আক্বীদা, আমল ও সংশ্লিষ্ট আলোচনা (একটি দলীল ভিত্তিক আর্টিকেল-৫)

শবে বরাত কি


নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি আরো ইরশাদ করেন, অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি সৃষ্টির প্রতি বিশেষ রহমত নাযিল করেন। অতঃপর সমস্ত সৃষ্টিকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে যারা মুশ*রিক এবং হিং*সুক অর্থাৎ যে তার মুসলমান ভাইয়ের সাথে হিংসা করে থাকে, তাদেরকে ওই রাত্রিতে ক্ষমা করেন না।

এ প্রসঙ্গে আক্বনা নামক কিতাবে উল্লেখ আছে-

ان جبريل عليه السلام نزل على النبى صلى الله عليه وسلم الليلة البراءة. وقال يا محمد صلى الله عليه وسلم اجتهد فى هذه الليلة فان فيها تقضى الحاجة فاجتهد النبى صلى الله عليه وسلم فاتاه جبريل عليه وسلم مرة ثانية وقال يا محمد صلى الله عليه وسلم بشر امتك فان الله تعالى غفر لجميع امتك من لا يشرك به شيئا ثم قال ارفع راسك فرفع راسه فاذا ابواب الجنة وفى رواية ابواب السماء مفتحة وعلى الباب الاول ملك ينادى طوبى لمن ركع هذه الليلة وعلى الباب الثانى ملك ينادى لمن سجد فى هذه الليلة وعلى الباب الرابع ملك ينادى طوبى لمن بكى من خشية الله تعالى فى هذه الليلة وعلى الباب الخامس ملك ينادى طوبى لمن عمل خيرا فى هذه الليلة وعلى الباب السادس ملك ينادى من سائل فيعطى سئوله وعل الباب السابع ملك يناده هل من مستغفر فيغفر له فقلت يا جبريل الى امتى تكونوا هذه الابواب مفتحة قال الى طلوع الشمس قال ان الله تعالى فيها عتقاء من النار بعدد شعر غنم بنى كلب.

অর্থ: হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি শবে বরাতে নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার নিকট অবতীর্ণ হয়ে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আজকের এই বরাতের রাত্রিতে ইবাদতে নিমগ্ন থাকুন। কেননা এই রাত্রিতে যাবতীয় মাক্বছুদ পুরা করা হবে। অতঃপর সে মুতাবিক নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ওই শবে বরাতে সারা রাত্রি ইবাদতে নিমগ্ন থাকলেন এবং হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম পূনরায় তথা দ্বিতীয়বার এসে বললেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আপনার উম্মতদেরকে সুসংবাদ প্রদান করুন যে, যারা মহান আল্লাহ পাক উনার সাথে শিরক করেনা এদের সকল নর-নারীকে মহান আল্লাহ পাক তিনি ক্ষমা করে দিবেন। অতঃপর হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, আপনি আপনার মাথা মুবারক উত্তোলন করুন। তখন নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মাথা মুবারক উত্তোলন করার সাথে সাথেই দেখতে পেলেন জান্নাতের দরজাগুলো অথবা আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত। প্রথম দরজার উপরে একজন ফেরেশতা রয়েছেন। তিনি আওয়াজ দিয়ে বলছেন, ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যিনি এই অর্ধ শা’বানের রাত্রিতে তথা বরাতের রাত্রিতে রুকু করেছেন। অতঃপর দ্বিতীয় দরজায় অপর একজন ফেরেশতা রয়েছেন, তিনিও উচ্চ স্বরে বলতেছেন ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যিনি বরাতের রাত্রিতে সিজদায় রত ছিলেন। এরূপ তৃতীয় দরজায় একজন ফেরেশতা রয়েছেন তিনিও উচ্চ আওয়াজে বলতে থাকেন, ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যিনি বরাতের রাত্রিতে মানুষের জন্যে দোয়া করে থাকেন। অনুরূপভাবে চতুর্থ দরজায় একজন ফেরেশতা আওয়াজ দিয়ে বলতে থাকেন ওই ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ যিনি এই শবে বরাতের রাত্রিতে আল্লাহ পাক উনার ভয়ে কাঁদছেন। পঞ্চম দরজায়ও একজন ফেরেশতা উচ্চ আওয়াজে বলতে থাকেন, ওই ব্যক্তির জন্যে সুসংবাদ যিনি এ রাত্রিতে ভালো কাজে নিয়োজিত রয়েছেন। অনুরূপভাবে ষষ্ঠ দরজায় একজন ফেরেশতা এ মর্মে আওয়াজ করে বলেন, এমন কোনো ব্যক্তি আছে, যিনি সত্যিকার ভিক্ষুক সে যা কিছু কামনা করবে তাই সে পাবে। তদ্রƒপ সপ্তম দরজায় একজন ফেরেশতা এ বলে চিৎকার করে থাকেন যে, এমন কোনো পাপী আছ কি? ক্ষমা প্রার্থনা কর মহান আল্লাহ পাক তাকে ক্ষমা করে দিবেন।


নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, আমি হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম: এ সমস্ত দরজাগুলো কতক্ষণ পর্যন্ত খোলা থাকবে? তিনি উত্তরে বললেন, সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত খোলা থাকবে। অতঃপর নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, এই বরাতের রাত্রিতে মহান আল্লাহ পাক তিনি বনী কালব গোত্রের বকরীর পশমের সম পরিমাণে অধিক সংখ্যক ব্যক্তিদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!

কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ অস্বীকারকারী ইহুদী-নাছারা বেদ্বীন বদদ্বীনদের চর ওহাবী খারিজী জামাতী দেওবন্দী গংরা শবে বরাত সম্পর্কে যেসব বিভ্রান্তিকর ভিত্তিহীন, বানোয়াট, গোমরাহী ও কুফরীমূলক বক্তব্য পেশ করেছে তা উল্লেখ করে তার দাঁতভাঙ্গা দলীলভিত্তিক সঠিক জাওয়াব যেমন সম্প্রতি ‘আহলে হাদীছ লাইব্রেরী ঢাকা’-এর সৌজন্যে প্রকাশিত একটি হ্যান্ডবিলে ‘শবে বরাত’ সম্পর্কে বিভ্রান্তিমূলক কতিপয় উক্তি করা হয়েছে। এতে যেসব প্রশ্নের উদয় হয়েছে তা সহজে বুঝার জন্য প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে কুরআন শরীফ ও হাদীছ শরীফ-এর আলোকে অকাট্য দলীলের ভিত্তিতে সঠিক জাওয়াব প্রদত্ত হলো:

মহান আল্লাহ পাক স্বীয় তিনি কালাম পাক-এ ইরশাদ করেন-

فاسئلوا اهل الذكر ان كنتم لا تعلمون

অর্থ: “তোমরা আহলে যিকির তথা আল্লাহওয়ালা গন উনাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, যদি তোমরা না জান।” (সূরা আম্বিয়া : আয়াত শরীফ ৭)


চলবে--------- 

৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন 


Post a Comment

Previous Post Next Post