প্রসঙ্গ: শবে বরাত : আক্বীদা, আমল ও সংশ্লিষ্ট আলোচনা (একটি দলীল ভিত্তিক আর্টিকেল-৪)
এ প্রসঙ্গে নুযহাতুল মাজালিশ নামক কিতাবের ১ম খন্ডের ১৫৭ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে-
مر حضرت عيسى بن مريم عليه السلام على جبل فراى فيه صخرة بيضاء فطاف بها حضرت عيسى عليه السلام وتعجب عنها فاوحى الله اليه اتريد ان ابين لك اعجب مما رأيت قال نعم فان فلقت الصخرة عن رجل بيده عكارة خضراء وعنده شجرة عنب فقال هذا رزق كل يوم فقال كم تعبد الله فى هذا الحجر فقال منذ اربع مائة سنة فقال حضرت عيسى عليه السلام يا ربى ما اظن انك خلقت خلقا افضل منه فقال من صلى ليلة النصف من شعبان من امة محمد صلى الله عليه وسلم ركعتين فهو افضل من عبادته اربع مائة عام قال عيسى عليه السلام ليتنى من امة محمد صلى الله عليه وسلم.
অর্থ: হযরত ঈসা ইবনে মারইয়াম আলাইহিস সালাম তিনি একটি পাহাড়ের উঁচু চূড়ার উপরে দিয়ে চলছিলেন। হঠাৎ করে ওই পাহাড়ের উপরেই একটি সাদা পাথর দেখতে পেলেন। অতঃপর আল্লাহ পাক উনার নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি ওই পাথরের চারপাশে ঘুরে আশ্চর্যান্বিত হলেন। অতঃপর উনার আশ্চর্যবোধ দেখে মহান আল্লাহ পাক তিনি উনার নিকট ওহী পাঠিয়ে বললেন, হে আমার নবী হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম! আপনি সাদা পাথরখানা দেখেই অবাক হয়েছেন, এর চেয়ে আশ্চর্যজনক বস্তু আপনি কি দেখতে চান?
জবাবে হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, জি বলতে না বলতেই পাথরটি ফেটে গেলো।
উহার মধ্যে সবুজ রঙের লাঠি হাতে নিয়ে একজন বুযুর্গ ব্যক্তি দাঁড়ানো আছেন এবং উনার সামনে একটি আঙ্গুরের গাছ আছে। অতঃপর সেই বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, ইহা আমার প্রতি দিনের খাবার। এরপর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি ওই বুযুর্গ ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বললেন, আপনি কতকাল পর্যন্ত এই সাদা পাথরের ভিতরে মহান আল্লাহ পাক উনার ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত আছেন? হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার এই প্রশ্নের জবাবে বুযুর্গ ব্যক্তি বললেন, সুদীর্ঘ চারশত বৎসর ধরে এই পাথরের ভিতরে আমি ইবাদত-বন্দেগী করছি। তখন হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি (আরো আশ্চর্য হয়ে) বললেন, ইয়া বারে ইলাহী! আমার ধারণা যে, হয়তোবা আপনি এই বুযুর্গ ব্যক্তির চেয়ে আর কোনো উত্তম মাখলুক সৃষ্টি করেননি। হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম উনার এই আবেগপূর্ণ বাণী শুনে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ করেন, উম্মতে হাবীবী উনাদের কোনো ব্যক্তি যদি অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে ২ রাকায়াত নামায আদায় করে উহা ওই বুযুর্গ ব্যক্তির চারশত বৎসরের ইবাদত হতেও উত্তম হবে। সুবহানাল্লাহ!
অতঃপর হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তিনি এই কথা শুনে বললেন, হায় আফসোস! আমি যদি আখিরী নবী, নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উম্মত তথা উম্মতে হাবীবী হতে পারতাম। সুবহানাল্লাহ!
উক্ত বিশ্ববিখ্যাত ‘নুযহাতুল মাজালিস’ কিতাবে আরো উল্লেখ আছে-
ان الجن والطير والسباع وحيتان البحر يصومون يوم النصف من شعبان
অর্থ: নিশ্চয়ই জিন, পশু-পাখি এবং এমনকি সমুদ্রের মাছেরাও অর্ধ শা’বানের তথা ১৫ই শা’বানের দিন রোযা রাখে। সুবহানাল্লাহ! কিতাবুল বরকত।
উক্ত কিতাবে আরো উল্লেখ আছে যে-
وعن النبى صلى الله عليه وسلم من صام من شعبان يوما حرم الله جسده على النار وكان رفيق حضرت يوسف عليه السلام فى الجنان واعطاه الله ثواب حضرت ايوب عليه السلام و حضرت داود عليه السلام. فان اتم الشهور كله هون الله عليه سكرات الموت ودفع عنه ظلمة القبر وهول منكر و نكير وستر الله عورته يوم القيامة.
وعن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه عن النبى صلى الله عليه وسلم قال جاءنى جبرائيل عليه السلام ليلة النصف من شعبان وقال يا محمد صلى الله عليه وسلم ارفع راسك الى السماء فقلت ما هذه الليلة؟ قال هذه ليلة يفتح الله فيها ثلث مائة باب من ابواب الرحمة يغفر لجميع من لا يشرك به شيئا الا ان يكون ساحرا او كاهنا او مصرا على الزنا او مدمن خمر وعنه صلى الله عليه وسلم قال يطلع الله على خلقه ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا مشرك والمشاحن يعنى المصارم لاخيه المسلم.
অর্থ: নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি শা’বান মাসে মাত্র একটি রোযা রাখবে তার শরীরকে মহান আল্লাহ পাক তিনি দোযখের আগুন থেকে হারাম করে দিবেন এবং বেহেশতের মাঝে সে ব্যক্তি হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম উনার সঙ্গী হিসেবে থাকবেন এবং তৎসঙ্গে হযরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম ও হযরত দাউদ আলাইহিস সালাম উনাদের ন্যায় ছওয়াব দান করবেন। অতঃপর কোনো ব্যক্তি যদি পূর্ণ শা’বান মাসেই রোযা রাখে তাহলে মহান আল্লাহ পাক তিনি তার উপর মৃত্যুর তাকলীফ সহজ করে দিবেন এবং কবরের অন্ধকার দূর করে দিবেন। অতপর মুনকার নাকীরের প্রশ্নের ভয়াবহ অবস্থা দূর করে দিবেন এবং ক্বিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ পাক তিনি তার লজ্জাস্থান আবৃত (ঢেকে) রাখবেন।
হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু থেকে আরো বর্ণিত আছে। নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, শা’বান মাসের অর্ধ রাতে তথা শবে বরাতে হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি এসে আমাকে বললেন: ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি আকাশের দিকে মাথা মুবারক উত্তোলন করুন। অতঃপর নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বললেন, এই রাত্রির বৈশিষ্ট্য কি? তখন হযরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, এই অর্ধ শা’বানের রাতে তথা শবে বরাতে মহান আল্লাহ পাক তিনি ৩০০টি রহমতের দরজা খুলে দিয়েছেন। যারা আল্লাহ পাক উনার সাথে শিরক করেনা, যাদু করেনা, গণক নয়, বারবার যিনা করেনা ও ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ছিন্ন করেনা। এ ধরনের সমস্ত জগদ্বাসীকে ক্ষমা করে থাকেন। সুবহানাল্লাহ!
চলবে---------
সুবহানাল্লাহ
ReplyDeletePost a Comment