প্রশ্নঃ- জাদু-টোনা থেকে বাঁচার কোনো সুন্নাতি আমল আছে কি?

জবাবঃ- জাদু-টোনা থেকে বাঁচার সুন্নাতি আমল

জাদু-টোনা থেকে বাঁচার সুন্নাতি আমল


জাদু-টোনা হারাম ও কবিরাহ গোনাহ। জাদু-টোনার প্রভাবে মানুষের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এমনকি জীবনহানিও ঘটে। যার ওপর জাদু-টোনা করা হয়; তার শরীরের চণি, নখ, চামড়া, ব্যবহৃত পোশাক সংগ্রহ করে তাতে এ জাদু করা হয়। এর ফলে জাদু-টোনার শিকার ব্যক্তি অসুস্থ কিংবা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। জাদু-টোনার ক্ষতি থেকে বাঁচার রয়েছে সুন্নাতি আমল। কী সেই আমল?


হাদিসের বর্ণনা থেকে জানা যায়, বনি জুরাইক গোত্রের লাবিদ বিন আসিম নামক এক ইয়াহুদি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর মাথার চুল মোবারক এবং তার ব্যবহৃত চিরুনির ভাঙ্গা দাঁত এর মাধ্যমে তাঁর ওপর জাদু করেছিল।


জানু-টোনা থেকে বাঁচার সুন্নাতি আমল


জাদু-টোনা থেকে বাঁচার একাধিক সুন্নাতি আমল আছে। হাদিসের বর্ণনা থেকে তা সুস্পষ্ট। তাহলো-


১. সকাল-সন্ধ্যায় ৩ সুরার আমল


> রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সকাল-সন্ধ্যা তিনবার করে সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক এবং সুরা নাস পড়বে। এ সুরাগুলো সব বিপদাপদের মোকাবেলায় যথেষ্ট হবে।’ (মুসলিম)


> হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন, ‘রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রাতে যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন নিজের উভয় হাত এক সঙ্গে মিলাতেন। তারপর সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক, সুরা নাস পড়তেন এবং উভয় হাতে ফুঁক দিতেন। তারপর দেহের যতটুকু অংশ সম্ভব হাত বুলিয়ে নিতেন। তিনি মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের সামনের অংশ থেকে শুরু করতেন। তিনি এরূপ তিনবার করতেন।’ (বুখারি)


যদি কেউ জাদুর শিকার হয়


> এক ইয়াহুদি একবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর জাদু করেছিল। যার ফলে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। জিবরিল আলাইহিস সালাম এসে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জানালেন যে, এক ইয়াহুদি তাকে জাদু করেছে এবং যে জিনিস দিয়ে জাদু করা হয়েছে তা একটি কূপের মধ্যে পাথরের নিচে আছে।


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই জিনিস কূপ থেকে উদ্ধার করার জন্য লোক পাঠালেন। সেখানে গিয়ে কয়েকটি গিরা পাওয়া গিয়েছিল। তখন তিনি সুরা নাস ও ফালাক্ব একসঙ্গে পড়ে ফুক দেন আর গিরাগুলো সঙ্গে সঙ্গে খুলে যায় এবং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে বিছানা থেকে ওঠেন।’


২. নিয়মিত আয়াতুল কুরসি একবার পড়া


নিয়মিত আয়াতুল কুরসি পড়লে জাদু-টোনার প্রভাব ও আক্রমণ থেকে মুক্ত থাকা যাবে। যারা নামাজ পড়েন প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তারা আয়াতুল কুরসির আমল করেন। এটিই তাদের জাদু-টোনা থেকে বেঁচে থাকার অন্যতম উপায়।


যদি কেউ জাদুর শিকার হয়


হজরত ওয়াহাব রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, যে ব্যক্তি জাদু-টোনার শিকার হয়, তাঁকে জাদুর প্রভাব থেকে মুক্ত করতে হলে নিম্নোক্ত আমলটি করতে হবে। আর তা হলো-


কুলের (বরই) সাতটি পাতা পাটায় বেটে নিতে হবে। অতঃপর আয়াতুল কুরসি পড়ে ওই বাটা কুল পাতার ওপর ফুঁ দিতে হবে। সেগুলো পানির সঙ্গে মিশাতে হবে। তা থেকে জাদুকৃত ব্যক্তিকে তিন ঢোক পানি পান করাতে হবে। অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করাতে হবে। ইনশাল্লাহ! এ আমলের কারো প্রতি জাদু ক্রিয়া হয়ে থাকে; তবে তা নষ্ট হয়ে যাবে।


৩. প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজের পরের আমল


প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার পর একবার আয়াতুল কুরসি ও উক্ত তিনটি সুরা (ইখলাস, ফালাক ও নাস) একবার করে পাঠ করা।


৪. রাতে ঘুমানোর আগের আমল


রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রাতে ঘুমানোর আগে সুরা তিনটি (ইখলাস, ফালাক ও নাস) পড়ে দুই হাত একত্রিত করে উভয় হাতের তালুতে ফুঁ দিয়ে  মাথা, মুখমণ্ডল ও শরীরের উপরিভাগ যতদূর সম্ভব হাত দ্বারা মাসেহ করা। (এভাবে তিন বার করা)


৫. সুরা বাকারা ও আল-ইমরান পড়া


হজরত আবু উমামাহ আল-বাহিলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি-


‏‘তোমরা দুটি উজ্জ্বল সুরা অর্থাৎ সুরা বাকারা এবং আল-ইমরান তেলাওয়াত কর। কিয়ামতের দিন এ দুটি সুরা এমনভাবে আসবে যেন তা দু খণ্ড মেঘ অথবা দুটি ছায়াদানকারী অথবা দুই ঝাঁক উড়ন্ত পাখি যা তার পাঠকারীর পক্ষ হয়ে কথা বলবে। আর তোমরা সুরা বাকারা পাঠ কর। এ সুরাটিকে গ্রহণ করা বরকতের কাজ এবং পরিত্যাগ করা পরিতাপের কাজ। আর বাতিলের অনুসারীগণ এর মোকাবেলা করতে পারে না। হাদিসের বর্ণনাকারী আবু মুআবিয়াহ বলেছেন, ‘আমি জানতে পেরেছি যে, বাতিলের অনুসারী বলে জাদুকরদের কথা বলা হয়েছে।’ (মুসলিম)


৬. সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করা


বিশেষভাবে রাতে নামাজের মধ্যে কিংবা বাইরে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত তেলাওয়াত করা। কেননা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যাক্তি রাতে সুরা বাকারার শেষ দুই আয়াত পাঠ করবে তার জন্য তা যথেষ্ট হয়ে যাবে।’ (বুখারি)


অর্থাৎ যে ব্যক্তি রাতের বেলা সুরা বাকারা শেষ দুটি আয়াত (২৮৫-২৮৬) পাঠ করবে আল্লাহর রহমতে তা জিনের সংক্রমণ, জাদু-টোনা ও বদনজর ইত্যাদি সব অনিষ্ট থেকে সুরক্ষার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।


৭. এ ছাড়াও হাদিসে বর্ণিত এ দোয়াগুলো পড়া-


- أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ


উচ্চারণ : ‘আউজু বিকালিমাতিল্লাহিত তাম্মাতি মিন শাররি মা খালাকা।’ (৩ বার)


অর্থ : ‘আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণী সমূহের ওসিলায় তাঁর কাছে আমি অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাই; তিনি যা সৃষ্টি করেছেন।’ (মুসলিম)


- أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ، مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ، وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لاَمَّةٍ


উচ্চারণ : আউজু বিকালিমাত্তিল্লাহিত তাম্মাতি মিন কুল্লি শায়ত্বানিন ওয়া হাম্মাতিন ওয়া মিন কুল্লি আইনিন লাআম্মাতিন।’


অর্থ : ‘আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমাসমূহের ওসিলায় সব শয়তান ও বিষাক্ত জীব-জন্তু থেকে ও যাবতীয় ক্ষতিকর চোখ (বদনজর) থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (বুখারি)।

Post a Comment

Previous Post Next Post