প্রসঙ্গ: শবে বরাত : আক্বীদা, আমল ও সংশ্লিষ্ট আলোচনা (একটি দলীল ভিত্তিক আর্টিকেল-৭)

শবে বরাত কি


শবে বরাতকে কেন্দ্র করে আতশবাজি ও আলোকসজ্জা করাঃ


শবে বরাতে আলোকসজ্জা ও আতশবাজি করা শরীয়ত সম্মত নয়। ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আলোকসজ্জা হচ্ছে গ্রীক ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথা। সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে হিন্দু ধর্মের ধর্মীয় প্রথা হিসেবে রূপ লাভ করে, যা শেষ পর্যন্ত দেয়ালী পূজা নামে মশহূর হয়। আলোকসজ্জা সেখান থেকে পর্যায়ক্রমে মুসলমানদের মধ্যে প্রবেশ করে যা প্রকৃতপক্ষে দ্বীন ইসলামের শেয়ার বা তর্জ-তরীক্বার অন্তর্ভুক্ত নয়। আর আতশবাজিও দ্বীন ইসলামের কোন শেয়ারের অন্তর্ভুক্ত নয়। প্রকৃতপক্ষে আতশবাজিও হিন্দু ধর্মের একটি ধর্মীয় প্রথার অন্তর্ভুক্ত। তাই মুসলমানের জন্য এসব করা সম্পূর্ণরূপে হারাম ও নাজায়িয। কারণ হাদীছ শরীফে ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت عبد الله بن عمر رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من تشبه بقوم فهو منهم

অর্থ: “হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেন, যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল বা সাদৃশ্য রাখবে তার হাশর-নশর তাদের সাথেই হবে।” (আহমদ, আবূ দাউদ)


এ প্রসঙ্গে একটি ওয়াক্বিয়া বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, তা হলো হিন্দুস্তানে একজন জবরদস্ত আল্লাহ পাক-উনার ওলী ছিলেন। যিনি ইন্তেকালের পর অন্য একজন বুযুর্গ ব্যক্তি উনাকে স্বপ্নে দেখে জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহ পাক-উনার ওলী, আপনি কেমন আছেন?” আল্লাহ পাক-উনার ওলী জাওয়াবে বলেন, “আপাতত আমি ভালই আছি, কিন্তু আমার উপর দিয়ে এক কঠিন সময় অতিবাহিত হয়েছে, যা বলার অপেক্ষা রাখেনা। আমার ইনতিকালের পর আমাকে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনারা সরাসরি আল্লাহ পাক উনার সম্মুখে পেশ করেন। আল্লাহ পাক তিনি হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম উনাদের বলেন, “হে হযরত ফেরেশতা আলাইহিমুস সালাম! আপনারা উনাকে কেন এখানে নিয়ে এসেছেন”? হযরত ফেরেশ্তা আলাইহিমুস সালাম উনারা বলেন, “আয় আল্লাহ পাক! আমরা উনাকে খাছ বান্দা হিসেবে আপনার সাথে সাক্ষাৎ করানোর জন্য নিয়ে এসেছি।” এটা শুনে আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “উনাকে এখান থেকে নিয়ে যান, উনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হওয়া উচিৎ। কেননা তিনি পুজা করেছেন। আল্লাহ পাক উনার ওলী তিনি বলেন, এটা শুনে আমি ভয় পেয়ে গেলাম এবং আমার সমস্ত শরীর ভয়ে কাঁপতে লাগলো। তখন আমি আল্লাহ পাক-উনার নিকট আরজু পেশ করলাম, “আল্লাহ পাক! আমার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হবে কেন? আমি তো সবসময় আপনার এবং আপনার হাবীব নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার ফরমাবরদার ছিলাম। কখনো ইচ্ছাকৃত নাফরমানি করিনি এবং কখনো পূজা করিনি আর মন্দিরেও যাইনি।” আল্লাহ পাক তিনি বললেন, “আপনি সেই দিনের কথা স্মরণ করুন, যেদিন হিন্দুস্তানে হোলি পুজা হচ্ছিলো। আপনার সামনে-পিছনে, ডানে-বামে, উপরে-নীচে সমস্ত গাছ-পালা, তরু-লতা, পশু-পাখী, কীট-পতঙ্গ সবকিছুকে রঙ দেয়া হয়েছিলো। এমতাবস্থায় আপনার সামনে দিয়ে একটি গর্দভ (গাধা) হেঁটে যাচ্ছিলো যাকে রঙ দেয়া হয়নি। তখন আপনি পান চিবাচ্ছিলেন, আপনি সেই গর্দভের গায়ে এক চিপটি পানের রঙ্গীন রস নিক্ষেপ করে বলেছিলেন, “হে গর্দভ! তোমাকে তো কেউ রং দেয়নি এই হোলি পুজার দিনে, আমি তোমাকে রং দিয়ে দিলাম। এটা কি আপনার পুজা করা হয়নি? আপনি কি জানেন না?”

من تشبه بقوم فهو منهم

অর্থ: “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাথে মিল রাখে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” কাজেই, “আপনার হাশর-নশর হিন্দুদের সাথে হওয়া উচিৎ।”

যখন আল্লাহ পাক এ কথা বললেন তখন আমি লা-জাওয়াব হয়ে গেলাম এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে বললাম, আয় আল্লাহ পাক! আমি এটা বুঝতে পারিনি, আমাকে কেউ বুঝিয়েও দেয়নি। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন। কিছুক্ষণ পর আল্লাহ পাক বললেন, “হ্যাঁ আপনাকে অন্যান্য আমলের কারণে ক্ষমা করা হলো।” কাজেই, মুসলমানদের জন্য শুধু শবে বরাতকেই কেন্দ্র করে নয় বরং কোন অবস্থাতেই আতশবাজি ও আলোকসজ্জা ইত্যাদি বিধর্মী বিজাতীয়দের কোন আমল করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

[দলীলসমূহ – (১) আহমদ, (২) আবূ দাউদ, (৩) বযলুল মাজহূদ, (৪) আউনুল মা’বূদ, (৫) মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, (৬) গ্রীক জাতির ইতিহাস, (৭) হিন্দু ধর্মের ইতিহাস ইত্যাদি।]


শবে বরাতের আমলঃ


শবে বরাত হচ্ছে মুক্তি বা ভাগ্য অথবা নাজাতের রাত। অর্থাৎ বরাতের রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করে ও পরবর্তী দিনে রোযা রেখে আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের সন্তুষ্টি অর্জন করাই মূল উদ্দেশ্য। শবে বরাতে কোন্ কোন্ ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে তা কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফে নির্দিষ্ট করে দেয়া হয়নি। তবে ইবাদত-বন্দেগী করার জন্য নির্দেশ করা হয়েছে। যেমন হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-

عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

হাদীছ শরীফে আরো বর্ণিত আছে-

عن حضرت ابى موسى الاشعرى رضى الله تعالى عنه عن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال ان الله تعالى ليطلع فى ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه الا لمشرك او مشاحن

অর্থ: “হযরত আবু মূসা আশআরী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আল্লাহ পাক-উনার হাবীব নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার থেকে বর্ণনা করেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রিতে ঘোষণা করেন যে, উনার সমস্ত মাখলূকাতকে তিনি ক্ষমা করে দিবেন। শুধু মুশরিক ও হিংসা-বিদ্বেষকারী ব্যতীত। (ইবনে মাজাহ, আহমদ, মিশকাত)

উপরোক্ত হাদীছ শরীফসমূহের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু হলো, রাত্রিতে ইবাদত-বন্দেগী করতে হবে এবং দিনে রোযা রাখতে হবে। যার মাধ্যমে আল্লাহ পাক বান্দাহকে ক্ষমা করে স্বীয় সন্তুষ্টি দান করবেন।


বরাতের রাত্রিতে যেসব ইবাদত করতে হবে তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো-


বরাতের নামাযঃ

শবে বরাতে ৪, ৬, ৮, ১০, ১২ রাকায়াত নফল নামায পড়া যেতে পারে।


ছলাতুত তাসবীহ নামাযঃ

অতঃপর ছলাতুত তাসবীহ-এর নামায পড়বে, যার দ্বারা মানুষের সমস্ত গুণাহখতা ক্ষমা হয়।


চলবে--------- 

৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক দিয়ে 


1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post