প্রসঙ্গ: শবে বরাত : আক্বীদা, আমল ও সংশ্লিষ্ট আলোচনা (একটি দলীল ভিত্তিক আর্টিকেল-৮)

What is Shabe Barat?


তাহাজ্জুদ নামাযঃ

অতঃপর তাহাজ্জুদের নামায পড়বে, যা দ্বারা আল্লাহ পাক-উনার নৈকট্য হাছিল হয়।


কুরআন শরীফ তিলাওয়াতঃ

কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করবে, যার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা-উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। কেননা নফল ইবাদতের মধ্যে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত হচ্ছে সর্বোত্তম আমল।


মীলাদ শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠঃ

মীলাদ শরীফ ও দুরূদ শরীফ পাঠ করবে, যার দ্বারা আল্লাহ পাক-উনার রসূল, নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনার সন্তুষ্টি অর্জিত হয়।


যিকির-আযকারঃ

যিকির-আযকার করবে, যার দ্বারা দিল ইছলাহ হয়।


কবর যিয়ারতঃ

কবরস্থান যিয়ারত করবে, যার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়। তবে কবর বা মাযার শরীফ যিয়ারত করতে গিয়ে সারারাত্র ব্যয় করে দেয়া জায়িয হবেনা। সুন্নত আদায়ের লক্ষ্যে নিকটবর্তী কোন কবরস্থান যিয়ারত করে চলে আসবে।


দান-ছদকাঃ

গরীব-মিসকীনকে দান-ছদকা করবে ও লোকজনদের খাদ্য খাওয়াবে, যার দ্বারা হাবীবুল্লাহ হওয়া যায়।


দোয়া-ইস্তিগফারঃ

আল্লাহ পাক-উনার নিকট দোয়া করবে, যার কারণে আল্লাহ পাক খুশি হবেন ও উনার নিয়ামত লাভ হবে। আর সর্বশেষ খালিছ ইস্তিগফার ও তওবা করবে, যার মাধ্যমে বান্দাহর সমস্ত গুণাহ খতা মাফ হয়ে আল্লাহ পাক- উনার খালিছ সন্তুষ্টি অর্জিত হয়। অর্থাৎ শ’বে বরাতের বারাকাত, ফুয়ূজাত, নিয়ামত, রহমত, মাগফিরাত ও নাজাত ইত্যাদি হাছিল করা যায়। স্মরণীয় যে, অনেক স্থানে দেখা যায় যে, লোকজন ছুবহে ছাদিকের পর আখিরী মুনাজাত করে থাকে। মূলতঃ মুনাজাত যে কোন সময়েই করা যায়। তবে বরাতের রাতে দোয়া কবুল করার যে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে তা ছুবহে ছাদিকের পূর্ব পর্যন্ত। এরপর বরাতের রাত অবশিষ্ট থাকেনা। কেননা, হাদীছ শরীফে স্পষ্টই বলা হয়েছে যে-

حتى يطلع الفجر

অর্থ: “ফজর বা ছুবহে ছাদিক পর্যন্ত আল্লাহ পাক তিনি দোয়া কবুল করেন।” অতএব, সকলের উচিৎ হবে মূল বা আখিরী মুনাজাত ছুবহে ছাদিকের পূর্বেই করা।

[দলীলসমূহ – (১) তাফসীরে কুরতুবী, (২) মাযহারী, (৩) রুহুল বয়ান, (৪) রুহুল মায়ানী, (৫) খাযিন, (৬) বাগবী, (৭) তিরমিযী, (৮) ইবনে মাজাহ, (৯) আহমদ, (১০) রযীন, (১১) মিশকাত, (১২) মিরকাত, (১৩) আশয়াতুল লুময়াত, (১৪) লুময়াত, (১৫) ত্বীবী, (১৬) ত্বালীক, (১৭) মুযাহিরে হক্ব ইত্যাদি।]


শবে বরাতে ইবাদতে ব্যাঘাত সৃষ্টি করে সারারাত্র ওয়াজ মাহফিল করাঃ


শবে বরাত হচ্ছে ইসলামের বিশেষ রাত্রিসমূহের মধ্যে একটি রাত্রি। যা শা’বানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত্রিতে হয়ে থাকে। শবে বরাত-এর অর্থ হচ্ছে মুক্তির রাত্র বা নাজাতের রাত্র। এ রাতে ওয়াজ-নছীহত করার আদেশও নেই। আবার নিষেধও করা হয়নি। তবে এ রাতে দোয়া কবুল করার ও ইবাদত বন্দেগী করার কথাই হাদীছ শরীফে ব্যক্ত হয়েছে। যেমন নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন-

ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتى العيدين

অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।” (মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ, আমালুল ইয়াত্তমি ওয়াল লাইলাতি)

হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-

عن حضرت على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الا من مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر

অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আল্লাহ পাক-উনার হাবীব নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের ১৫ তারিখ রাত্রি অর্থাৎ বরাতের রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক তিনি উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিবো।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছো কি? আমি তাকে রিযিক দান করবো।” “কোন মুছিবতগ্রস্ত ব্যক্তি আছো কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিবো।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ, মিশকাত)

উক্ত হাদীছ শরীফ - এর ব্যাখ্যায় ইমাম- মুজতাহিদগণ বলেন যে-

ليلة البراءة هى ليلة العفو والكرم، ليلة التوبة والندم، ليلة الذكر والصلوة، ليلة الصدقات والخيرات، ليلة الدعاء والزيارة، ليلة الصلاة على النبى صلى الله عليه وسلم، ليلة تلاواة القران الكريم

অর্থ: “বরাতের রাত্র হলো ক্ষমা ও দয়ার রাত্র, তওবা ও লজ্জিত হওয়ার রাত্র, যিকির ও নামাযের রাত্র, ছদক্বা ও খয়রাতের রাত্র, দোয়া ও যিয়ারতের রাত্র, দুরূদ শরীফ তথা ছলাত-সালাম পাঠ করার রাত্র এবং কুরআন শরীফ তিলাওয়াতের রাত্র।”

কাজেই, বরাতের রাতে যেহেতু ওয়াজ নছীহতের আদেশও করা হয়নি এবং নিষেধও করা হয়নি, তাই মুছল্লীদেরকে বরাতের রাতের ফযীলত ও ইবাদত-বন্দেগীর নিয়ম-কানুন, তর্জ-তরীক্বা বাতিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে সংক্ষিপ্ত ওয়াজ-নছীহত করা অবশ্যই জায়িয ও প্রয়োজন। তাই বলে, সারা রাত্র ওয়াজ করে মুছল্লীদেরকে নামায, তিলাওয়াত, যিকির-আযকার, দোয়া মুনাজাত ইত্যাদি ইবাদত বন্দেগী হতে মাহরূম করা কখনোই শরীয়ত সম্মত নয়। বরং হাদীছ শরীফের খিলাফ। শুধু তাই নয় এতে হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা হয়। আর হক্কুল ইবাদ নষ্ট করা কবীরা গুণাহর অন্তর্ভুক্ত। কারণ ওয়াজ বৎসরের যে কোন দিনেই করা যায়। কিন্তু বরাতের রাত্র বৎসরে মাত্র একবারই পাওয়া যায়। যদি কেউ পরবর্তী বৎসর হায়াতে থাকে তবেই সে বরাতের রাত্র পাবে। কাজেই এই মহামূল্যবান রাত্রকে শুধুমাত্র ওয়াজ করে ও শুনে অতিবাহিত করে দেয়া সুন্নতের খিলাফ।

আর সুন্নতের খিলাফ কাজ করে আল্লাহ পাক ও নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের রেজামন্দী বা সন্তুষ্টি কস্মিনকালেও হাছিল করা সম্ভব নয়। মূলকথা হলো, বরাতের রাত্র মূলতঃ ইবাদত-বন্দেগীর রাত্র, সারা রাত্র ওয়াজ করে ইবাদত বন্দেগীতে বিঘ্ন ঘটানো এবং মানুষদেরকে ইবাদত থেকে মাহরূম করা সম্পূর্ণরূপেই শরীয়তের খিলাফ। এ ধরণের কাজ থেকে বেঁচে থাকা সকলের জন্যেই দায়িত্ব ও কর্তব্য।

[দলীলসমূহ- (১) আহকামুল কুরআন জাস্সাস, (২) কুরতুবী, (৩) রুহুল মাআনী, (৪) রুহুল বয়ান, (৫) ইহ্ইয়াউ উলূমিদ্দীন, (৬) কিমিয়ায়ে সা’য়াদাত, (৭) ইবনে মাজাহ, (৮) মিশকাত, (৯) মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, (১০) মিরকাত, (১১) আশয়াতুল লুময়াত, (১২) লুময়াত, (১৩) শরহুত্ ত্বীবী, (১৪) তালিকুছ ছবীহ, (১৫) মুযাহিরে হক্ব, (১৬) আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাতি ইত্যাদি]


চলবে--------

৯ম (শেষ) পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন 


1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post