তিনটি কথার নছিহৎ 

মুনাব্বেহাত


পৃষ্ঠা নাম্বার ১৩

রাছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে অছাল্লাম বলিয়াছেন , যে ব্যক্তি সকালে উঠিয়া অভাব অনটনের শেকায়েত ( অনুযোগ ) করিতে থাকে সে তাহার প্রতিপালকের বিরুদ্ধে শেকায়েত করিল । যে ব্যক্তি সকালে উঠিয়া দুনিয়ার ব্যাপারে পেরেশান হইল সে আল্লাহ্তায়ালার উপর নারাজ হইল । যে ব্যক্তি ধনীর নিকট তাহার ধনের জন্য তাওয়াজু বা হীনতা প্রকাশ করিল তাহার দুই তৃতীয়াংশ দীন চলিয়া হযরত আবুবকর ছিদ্দীক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন , তিনটি বিষয় অপর তিনটি বিষয়ের বিনিময়ে মিলে না - ধন সম্পদ আকাঙ্ক্ষার বিনিময়ে মিলে না -যৌবন খেজাবের বিনিময়ে মিলে না - স্বাস্থ্য ঔষধের বিনিময়ে মিলে না ; অর্থাৎ ধন যৌবন ও স্বাস্থ্য যাহা আল্লাহ তকদীর করিয়া রাখিয়াছেন , তাহাই হইয়া থাকে । হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন লোকজনের সহিত দোস্তি রাখা আকলের অর্ধেক , উত্তম প্রশ্ন এলেমের অর্ধেক এবং উত্তম তদবির জীবিকা অর্জনের অর্ধেক । হযরত ওছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন , যে ব্যক্তি দুনিয়াকে ত্যাগ করে আল্লাহতায়ালা তাহাকে ভালবাসেন , যে ব্যক্তি গোনাহ্কে ত্যাগ করে ফেরেস্তাগণ তাহাকে ভালবাসে এবং যে ব্যক্তি মুসলমানগণের প্রতি লোভকে সংবরণ করে মুলমানগণ তাহাকে পেয়ার করে । হযরত আলী ( রাঃ ) বলিয়াছেন , দুনিয়ার নেয়ামতের মধ্যে ইসলাম নেয়ামতই তোমার জন্য যথেষ্ট ; কাজ কর্মের মধ্যে এবাদতের কাজই তোমার জন্য যথেষ্ট , উপদেশ গ্রহণের জন্য মৌতের উপদেশই তোমার জন্য যথেষ্ট ।

 হযরত আবদুল্লাহ বিন মাছউদ ( রাঃ ) বলিয়াছেন , বহু লোক ধন্ সম্পদ প্রাপ্তির কারণে গোনার কাজে বাড়িয়া চলিতেছে , বহু লোক 


পৃষ্ঠা নাম্বার ১৪

তাহার প্রশংসার কারণে ফেতনায় পড়িয়া যাইতেছে , বহু লোক নিজেদের দোষাবলী গোপন থাকার কারণে ধোকায় পড়িয়া যাইতেছে । হযরত দাউদ আলাইহেচ্ছালামের নিকট জবুর কিতাবে এই মর্মে অহী আসিল , বুদ্ধিমান লোকের কর্তব্য যে সে তিনটি বস্তু ছাড়া অপর কিছুতে নিজকে লিপ্ত না করে , আখেরাতের জন্য সম্বল সংগ্রহ করা , জীবিকা অর্জনের জন্য মেহনত করা , হালাল বস্তুর আস্বাদ গ্রহণ করা । হযরত আবু হুরায়রা ( রাঃ ) হইতে বর্ণিত আছে যে , রাছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে অচ্ছাল্লাম বলিয়াছেন- তিনটি বিষয় মুক্তিদান করে আর তিনটি বিষয় ধ্বংশ করে , তিনটি বিষয় পদমর্যাদা বৃদ্ধি করে আর তিনটি বিষয় গোনার কাফ্ফারা হয় । মুক্তিদায়ক বিষয় এই - প্রকাশ্যে ও গোপনে আল্লাহকে ভয় করা , দরিদ্রতা ও সচ্ছলতার মধ্য পন্থা অবলম্বন করা , খোশ্ মেজাজ ও গোস্বা উভয় অবস্থায় ন্যায় বিচার করা । ধ্বংসকারী বিষয়গুলি এই - কঠোর কৃপণতা , নফছের খাহেশ বা কুপ্রবৃত্তির তাবেদারী করা এবং আত্ম গৌরব করা । পদমর্যাদা বর্ধনকারী কার্য এই - ছালাম প্রচার করা , ক্ষুধিতকে আহার দান করা , লোকজন ঘুমাইয়া পড়িলে রাত্রি জাগিয়া নামায পড়া । গোনাহের কাফ্ফারা এই - শীতকালে সকাল বেলায় পুরাপুরী অজু করা , নামাজের এনতেজারী করা । জন্য পায়ে হাটিয়া চলা এবং নামাজ পড়িয়া অন্য এক নামাজের হযরত জিবরাইল আলাই হে - চ্ছালাম মুহম্মদ মুস্তফা ছাল্লাল্লাহু আলাইহে অছালামকে বলিলেন , হে মুহম্মদ যতকাল ইচ্ছা বাঁচিয়া থাকুন অবশেষে আপনাকে মরিতে ইহবে , যাহাকে ইচ্ছা ভাল বাসুন অবশেষে তাহা হইতে জুদা হইতে হইবে এবং যাহা ইচ্ছা আমল করুন অবশেষে তাহার জ্বেজা বা বদলা পাইবেন । রাছুলুল্লাহ ( দঃ ) বলিয়াছেন , তিন শ্রেণীর লোককে , আল্লাহতায়ালা ঐ দিন আরশের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন যেইদিন তাঁহার ছায়াছাড়া অন্য কোন ছায়া থাকিবেনা- যে ব্যক্তি কষ্টের মধ্যে অজু করে- যে ব্যক্তি অন্ধকারে মছজিদে গমন করে এবং যে ব্যক্তি ক্ষুধিতকে আহার দেয় ।


পৃষ্ঠা নাম্বার ১৫ 

কথিত আছে , হযরত ইবরাহিম আলাই - হে - চ্ছালামকে জিজ্ঞাসা করা হইল , কোন কারণে আল্লাহ আপনাকে খলীল ( পরম বন্ধু ) বলিয়া গ্রহণ করিয়াছে ? তিনি বলিলেন তিন কারণে আল্লাহর আদেশকে অপরের আদেশের উপর প্রধান্য দিয়াছি , আমার যে বিষয়ে আল্লাহ জিম্মা গ্রহণ করিয়াছেন ( রেজেক ) তাহার কোনো ভাবনাই করি না , কোনো সন্ধ্যায় বা কোনো সকালে মেহমান ছাড়া আহার করি নাই । কোন হাকীম বলিয়াছেন , তিনটি বিষয় দুঃখকে বিদূরিত করে আল্লাহর জিকির করা এবং তাহার অলীগণের সহিত সাক্ষাৎ করা । ও ছুন্নতের পায়রবী করা যাহার নিকট আল্লাহর ছুন্নত , রাছুলুল্লাহর ছুন্নত এবং আউলিয়াগণের ছুন্নত নাই তাহার হাতে কিছুই নাই । তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হইল - আল্লাহর সুন্নত কি ? উত্তরে বলিলেন , আল্লাহর ছুন্নত গুপ্ত ভেদকে গোপন রাখা ; তাহাকে জিজ্ঞাসা করা হইলো - রাছুলুল্লার ছুন্নত কি ? উত্তরে বলিলেন , লোকজনের মধ্যে মিলমিশ রাখা , জিজ্ঞাসা করা হইল অলীদের ছুন্নত কি ? উত্তরে বলিলেন , লোকজনের অত্যাচার সহ্য করা । আমাদের পূর্ব জামানার লোকজন পরস্পরকে তিনটি বিষয়ে উপদেশ দিতেন এবং তাহা পরস্পর লিখিয়া লইতেন- যে ব্যক্তি আখেরাতের উদ্দেশ্যে কাজ করে , আল্লাহ তাহার দীন ও দুনিয়ার বিষয়াদি সমাধা করিয়া দেন । যে ব্যক্তি তাহার অন্তরকে সুন্দর করে আল্লাহ তাহার জাহেরকে সুন্দর করিয়া দেন । যে ব্যক্তি আল্লাহর সংগে তাহার সম্পর্ক ঠিক রাখে আল্লাহ তাহার ও লোকজনের মধ্যে কারবার ঠিক করিয়া দেন । হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন , তুমি আল্লাহর নিকট সর্বাপেক্ষা অধম লোক হইয়া যাও , তুমি নিজের নিকট সর্বাপেক্ষা অধম লোক হইয়া যাও এবং লোক সমাজে একজন সাধারণ ব্যক্তি হইয়া যাও । হযরত ওজাইর আলাই - হে - চ্ছালামের প্রতি আল্লাহতায়াল অহী পাঠাইলেন , হে ওজাইর ! যখন তুমি ছগিরা ( ছোট ) গোনাহ করিবে


পৃষ্ঠা নাম্বার ১৫ 

তাহার ক্ষুদ্রতার দিকে লক্ষ্য করিবেনা বরং যাহার নিকট তুমি গোনাহ করিয়াছে তাহার দিকে লক্ষ্য করিবে । যখন তোমার নিকট সামান্য কিছু খায়ের বা মঙ্গল আসে তখন তাহার অল্পতার দিকে দেখিবেনা বরং যিনি তোমাকে এই রেজেক দান করিয়াছেন তাহার দিকে খেয়াল করিবে । যখন তোমার নিকট কোন বালা মুছীবত উপস্থিত হয় তখন লোকজনের নিকট আমার শেকায়েত করিওনা যে রূপ আমি আমার ফেরেশতাগণের নিকট তোমার কোন শেকায়েত করিনা , যখন তোমার দোষাবলী আমার নিকট উপস্থিত হয় । হযরত হাতেম আছামম্ ( রাঃ ) বলিয়াছেন এমন কোন প্রভাত আসেনা যখন শয়তান আসিয়া আমাকে এই কথা না বলে “ তুমি কি খাইবে , তুমি কি পরিধান করিবে এবং কোথায় বাস করিবে ? আমি তাহাকে বলি আমি মৌত ভক্ষণ করিব কাফন পরিধান করিব এবং কবরে বাস করিব । কথিত আছে যে , মালাকুল মৌত হযরত ইবরাহিম আলাই হেচ্ছালামের নিকট তাঁহার রূহ কবজ করিবার জন্য হাজির হইলেন । হযরত ইবরাহিম ( আঃ ) বলিলেন- হে মালাকুল মৌত । তুমি কি কখনও কোন খলীলকে ( পরম বন্ধু ) তাহার খলীলের রূহ কবজ করিতে দেখিয়াছে ? মালাকুল মৌত আল্লাহর নিকট যাইয়া তাহা জিজ্ঞাসা করিলেন । আল্লাহতায়ালা তাহাকে বলিলেন ; তুমি যাইয়া বলো , তুমি কি এমন কোন খলীলকে দেখিয়াছ যে তাহার খলীলের সংগে সাক্ষাৎ করিতে অনিচ্ছুক ? তিনি ফিরিয়া যাইয়া হযরত ইবরাহিম ( আঃ ) কে এই কথা বলিলেন । হযরত ইবরাহিম ( আঃ ) বলিলেন , এই মুহূর্তে আমার জান কবজ কর । রাছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াছাল্লাম বলিয়াছেন , যে ব্যক্তি গোনার অপমান হইতে বাহির হইয়া এবাদতের সম্মানের দিকে ধাবিত হইলো আল্লাহতায়ালা তাহাকে বিনা মালে ধনী করিবেন , বিনা সৈন্যে সাহায্য করিবেন এবং বিনা কবিলায় সম্মান দান করিবেন ।


পৃষ্ঠা নাম্বার ১৭ 

রেওয়ায়েত আছে যে , রাছুলুল্লাহ ( ছাঃ ) একদা তাহার ছাহাবীগণের নিকট গমন করিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন , তোমাদের প্রাতঃকাল কিরূপ হইলো , তাহারা বলিলেন , আমরা আল্লাহর উপর ঈমান রাখা অবস্থায় প্রভাত করিলাম । তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন , তোমাদের ঈমানের আলামত কি ? তাঁহারা বলিলেন আমরা বালা মছীবতের বেলায় ছবর করি , সুখের সময় শোকর করি , আল্লাহর কাজা বা বিধানে রাজী থাকি । হুজুর বলিলেন , কা'বার মালিকের কছম তোমরা খাঁটি ঈমানদার । আল্লাহতায়ালা কোন্ নবীর নিকট ওহী পাঠাইলেন , আমার সংগে মুহব্বত রাখা অবস্থায় যদি কাহারও মৃত্যু ঘটে , আমি তাহাকে আমার বেহেশতে দাখেল করিব । আমাকে ভয় করা অবস্থায় যদি কাহারও মৃত্যু হয় আমি তাহাকে আমার দোজখের আগুন হইতে রক্ষা করিবো ; আমার নিকট লজ্জিত অবস্থায় যাহার মৃত্যু হয় আমি ফেরেশতাগণকে তাহার গোনাহ সমূহ ভুলাইয়া দিবো । হযরত আবদুল্লাহ বিন মাছউদ ( রাঃ ) বলিয়াছেন , আল্লাহতায়ালা তোমার উপর যাহা ফরজ করিয়াছেন তাহা আদায় করো , তাহা হইলে তুমি সর্বাপেক্ষা বড় আবেদ হইবে । হারাম বস্তু হইতে পরহেজ করো তাহা হইলে সর্বাপেক্ষা বড় জাহেদ ( দরবেশ ) হইবে এবং আল্লাহতায়ালা তোমার কিছমতে যাহা রাখিয়াছেন তাহাতে রাজি থাকো তাহা হইলে সর্বাপেক্ষা বড় ধনী হইবে । হযরত ছালেহ মারকাদী ( রাঃ ) কোনো গৃহে গমন করিয়া বলিলেন , হে গৃহ ! তোমার প্রথম অধিবাসীগণ কোথায় , তোমার পূর্ববর্তী নির্মাণকারীগণ কোথায় , তোমার আদিম বাসেন্দাগণ কোথায় ? তখন কোনো গায়েবী আওয়াজ হইলো তাহাদের সব চিহ্ন বিলুপ্ত হইয়া গিয়াছে । তাহাদের দেহসমূহ মাটিতে মিশিয়া গিয়াছে এবং তাহাদের আমলসমূহ তাহাদের গলার হার হইয়া রহিয়াছে । J হযরত আলী ( রাঃ ) বলিয়াছেন , তুমি যাহাকে ইচ্ছা এহছান করো , তুমি তাহার আমীর হইয়া যাইবে , তুমি তাহাকে ইচ্ছা তাহার নিকট হাত


পৃষ্ঠা নাম্বার ১৮ 

পাতো তুমি তাহার কয়েদী হইয়া যাইবে এবং যাহাকে ইচ্ছা তাহার প্রতি বেপরওয়া হইয়া যাও তুমি তাহার সমকক্ষ হইয়া যাইবে । হযরত ইয়াহ্ইয়া ( রাঃ ) বলিয়াছেন , গোটা দুনিয়াকে ত্যাগ করা মানে গোটা দুনিয়াকে গ্রহণ করা , গোটা দুনিয়াকে গ্রহণ করা মানে গোটা দুনিয়াকে ত্যাগ করা । যে ব্যক্তি গোটা দুনিয়াকে গ্রহণ করিয়াছে সে তাহার সবটা ত্যাগ করিয়াছে । দুনিয়া গ্রহণ করা মানে তাহাকে তরক করা এবং তাহাকে তরক করা মানে তাহাকে গ্রহণ করা । ( গোটা দুনিয়াকে ত্যাগ করা কোনো মতেই সম্ভবপর নহে কেনো না তাহা হইতে জীবিকা অর্জন করিতে হয় এবং তাহাতেই আখেরাতের সম্বল সংগ্রহ করিতে হয় । ) হযরত ইব্রাহীম আদহাম ( রাঃ ) কে ( যিনি একজন বড় বাদশা ছিলেম ) জিজ্ঞাসা করা হইলো কি উপায়ে আপনি জোহদ ( দরবেশী ) হাছেল করিলেন । তিনি বলিলেন , তিন উপায়ে -আমি কবরকে অতি ভয়াবহ দেখিতে পাইলাম , অথচ সেখানে কোনো দরদী সংগী নাই । সম্মুখে সুদূর পথ দেখিতে পাইলাম অথচ আমার সঙ্গে কোন সম্বল নাই এবং প্রবল প্রতাপশালী আল্লাহতায়ালাকে বিচারক দেখিতে পাইলাম অথচ নির্দোষ প্রমাণের জন্য আমার নিকট কোনই দলীল নাই । হযরত শিবলী রাহমাতুল্লাহ আলাইহে দোয়ায় বলিতেন - হে আল্লাহ আমার ইচ্ছা হয় যে আমার দরিদ্রতা ও দূর্বলতা সত্ত্বেও আমার সব নেকীগুলি তোমাকে দেই তবে কেন হে মাওলা ! তুমি অভাব বিহীন হওয়া সত্ত্বেও আমার গোনাহ সমূহ ক্ষমা করিয়া না । তখন নেদা আসিল - যদি তুমি আল্লাহর সঙ্গে যোগাযোগ করিতে ইচ্ছা করো তবে নিজের নফ্‌ছকে ভয় করো । যদি তোমরা মিলনের মধুরতার আস্বাদ গ্রহণ করিতে চাও তবে বিচ্ছেদের তিক্ততাও বুঝিতে পারিবে । হযরত ছুফিয়ান ছাওরী ( রাঃ ) কে আল্লাহর সঙ্গে মহব্বতের সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হইল । তিনি বলিলেন তুমি কোনো খোবছোরত চেহারা , কোনো খোশ আওয়াজ এবং সুবক্তার সঙ্গে ভালবাসা জন্মাইও না ।


পৃষ্ঠা নাম্বার ১৯ 

হযরত ইবনে আব্বাছ ( রাঃ ) বলিয়াছেন । জোেহদ শব্দে তিনটি অক্ষর আছে , ‘ জা ' অক্ষর দ্বারা ইঙ্গিত হইতেছে , জাদুল মায়াদ ( আখেরাতের সম্বল ) -এর দিকে ' হা ' দ্বারা ইঙ্গিত হইতেছে হুদালিদ্দিন দীনের হেদায়েতের দিকে এবং দাল দ্বারা ইঙ্গিত হইতেছে - দাওয়াম আলাহ্বায়াত - সদাসর্বদা এবাদতের দিকে । তিনি অন্যত্র বলিয়াছেন , জোেহদ শব্দে তিনটি অক্ষর আছে । ' জা ’ অক্ষর দ্বারা তরকুজ জিনাত সাজসজ্জা ত্যাগ করা , ' হা ' অক্ষর দ্বারা তরকু হাওয়া- শাহওয়াত কুপ্রবৃত্তি বর্জ্জন করা এবং ‘ দাল ’ দ্বারা তরকুদ দুনিয়া - দুনিয়া ত্যাগ করা ইঙ্গিত ইহতেছে । হযরত হামেদ লাফাফের ( রাঃ ) নিকট এক ব্যক্তি আসিয়া বলিলেন , আপনি আমাকে উপদেশ দান করুন । তিনি বলিলেন - তুমি তোমার দীনের জন্য কোরআনের গেলাফের মতো একটি গেলাফ করিয়া লও । তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করা হইলো দীনের গেলাফ কি ? তিনি বলিলেন , নিতান্ত জরুরী কথাবার্তা ছাড়া অন্য কথাবার্তা তরক করা , নিতান্ত জরুরী বিষয় বস্তু ও বিষয় ছাড়া দুনিয়াকে তরক করা , নিতান্ত জরুরী কারণ ছাড়া লোকের সঙ্গে মিলামিশা তরক করা । তারপর জানিয়া রাখো যে জোহদ মানে ছোট বড় হারাম বস্তু হইতে পরহেজ করা , সহজ ও কঠিন সম্পদ , ফরজ আদায় করা এবং দুনিয়া অল্প হউক বা অধিক হউক তাহা দুনিয়াদারের প্রতি ছাড়িয়া দেওয়া । হযরত লোকমান হাকীম তাঁহার ছেলেকে বলিলেন , ওহে । মানুষের মধ্যে তিনটি ভাগ রহিয়াছে । এক তৃতীয়াংশ আল্লাহর জন্য , এক তৃতীয়াংশ নফছের জন্য এবং এক তৃতীয়াংশ ( কবরের মধ্যে ) কীটের জন্য । তবে যাহা আল্লাহর জন্য তাহা তাহার রূহ , যাহা নছের জন্য তাহার আমল এবং যাহা কীটের জন্য তাহা তাহার দেহ । হযরত আলী ( রাঃ ) বলিয়াছেন , তিনটি বস্তু মানবের স্মরণ শক্তিকে বাড়াইয়া দেয় এবং বলগমকে ( কফ ) দূর করে - মেছওয়াক করা , রোজা রাখা এবং কোরআন তেলাওয়াত করা ।


পৃষ্ঠা নাম্বার ২০ 

হযরত কা'ব আহবার ( রাঃ ) বলিয়াছেন , ঈমানদারের শয়তান হইতে রক্ষা পাইবার তিনটি দেওয়াল আছে - মসজিদ একটি দেওয়াল , আল্লাহর জিকির একটি দেওয়াল এবং কোরআন তেলাওয়াত একটি দেওয়াল । জনৈক হাকীম বলিয়াছেন , তিনটি বস্তু আল্লাহর ধন ভান্ডার হইতে আল্লাহতায়ালা যাহাকে ভালবাসেন তাহা ছাড়া অন্য কাহাকেও তাহা দান করেন না - অভাব , বিমারী এবং ছবর । হযরত ইবনে আব্বাছ ( রাঃ ) কে জিজ্ঞাসা করা হইলো সর্বাপেক্ষা ভালো দিবস কোনটি , সর্বাপেক্ষা ভালো মাস কোনটি এবং সর্বাপেক্ষা ভালো আমল কোনটি ? তিনি বলিলেন , সর্বাপেক্ষা ভালো দিবস জোয়া , সর্বাপেক্ষা ভালো মাস রমজান এবং সর্বাপেক্ষা ভালো আমল সঠিক সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া । তিন দিবস পরে হযরত আলী ( রাঃ ) জানিতে পারিলেন যে হযরত ইবনে আব্বাছকে ( রাঃ ) ও এই প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হইয়াছিলো , তিনিও একই উত্তর দিয়া বলিলেন , যদি সারা জাহানের আলেম , ফকীহ ও হাকীমগণকে এই বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয় ; তবে তাহারা হযরত ইবনে আব্বাছের ( রা ) ন্যায় উত্তর দিবেন । কিন্তু আমি এই কথা বলিতে চাই যে তোমার সর্বাপেক্ষা উত্তম আমল তাহা যাহা আল্লাহ কবুল করেন । তোমার সর্বাপেক্ষা উত্তম মাস তাহা যাহাতে তুমি তাওবাতান নছুহ ( খালেছ তওবা ) করো এবং বাহির হইয়া যাও । সর্বাপেক্ষা উত্তম দিন তাহা যাহাতে তুমি ঈমানের সঙ্গে দুনিয়া হইতে কথিত আছে , যখন আল্লাহতায়ালা কোন বন্দার সংঙ্গে ভালাই করিতে ইচ্ছা করেন তাহাকে দীনের জ্ঞান দান করেন , দুনিয়ার প্রতি তাহার আসক্তি থাকেনা এবং তাহার নিজের দোষাবলী দেখাইয়া দেন । রাছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহে অছাল্লাম বলিয়াছেন , দুনিয়ার তিনটি বস্তু আমার নিকট প্রিয় - খোশবু , স্ত্রীলোক এবং নামাজ যাহা


পৃষ্ঠা নাম্বার ২১ 

আমার চক্ষের শীতলতা আনায়ন করে । তাঁহার সংগে আরো ছাহাবীগণ বসা ছিলেন । হযরত আবুবকর ছিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন , হে আল্লাহর রাছুল ! আপনি সত্য বলিয়াছেন । আমার নিকটও দুনিয়ার তিনটি বস্তু প্রিয় রাছুলুল্লার চেহারার দিকে তাকাইয়া থাকা , রাছুলুল্লাহর জন্য আমার মাল খরচ করা এবং রাছুলুল্লাহর খেদমতে আমার কন্যা থাকা । হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিলেন । হে আবু বকর ( রাঃ ) আপনি সত্য বলিয়াছেন আমার নিকটও দুনিয়ার তিনটি বস্তু প্রিয় , নেক কাজের আদেশ করা এবং মন্দ কাজ হইতে নিষেধ করা এবং পুরাতন বস্ত্র । হযরত ওছমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিলেন , হে ওমর ( রাঃ ) ! আপনি সত্য বলিয়াছেন , আমার নিকট , দুনিয়ার তিনটি বস্তু প্রিয় ভুখাকে আহার দেওয়া , বস্ত্রহীনকে বস্ত্র দেওয়া এবং কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করা । হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিলেন , হে ওছমান ( রাঃ ) আপনি সত্য বলিয়াছেন , আমার নিকটও দুনিয়ার তিনটি বস্তু প্রিয় - মেহমানের খেদমত করা , গ্রীষ্মকালে রোজা রাখা এবং তলওয়ার দ্বারা আঘাত করা অর্থ্যাৎ জেহাদ করা । তখন হযরত জিবরাইল আলাইহেচ্ছালাম উপস্থিত হইয়া বলিলেন , আল্লাহতায়ালা আপনাদের আলাপ আলোচনা শ্রবণ করিয়া আমাকে ও আপনাকে এই প্রশ্ন করিবার জন্য পাঠাইয়াছেন যে আমি যদি দুনিয়াবাসী হইতাম তবে আমি কোন কোন বস্তু ভালবাসিতাম । তখন রাছুলুল্লাহ ( ছাঃ ) তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেন , আপনি যদি দুনিয়াবাসী হইতেন তবে কোন কোন বস্তু ভালবাসিতেন । হযরত জিবরাইল ( আঃ ) বলিলেন , বিপথগামীকে হেদায়েত করা , ধাৰ্ম্মিক অভাবগ্রস্ত পরিবারকে সাহয্য করা এবং এবাদতকারী গরীবদিগকে ভালোবাসা । তিনি আরো বলিলেন , আল্লাহু জাল্লাজালালুহু ও তাহার বান্দার তিনটি খাছলতকে ভালবাসেন - আল্লাহর এবাদতে নিজকে যথাসাধ্য নিয়োজিত করা , গোনার জন্য অনুতপ্ত হইয়া ক্রন্দন করা এবং অভাব অনটনে ছবর করা । জনৈক হাকীম বলিয়াছেন , যে ব্যক্তি শুধু আকলকে আকড়াইয়া ধরিলো অর্থ্যাৎ প্রত্যেক কাজে আকলের সাহায্য গ্রহণ করিলো সে


পৃষ্ঠা নাম্বার ২২  

গোমরাহ হইয়া গেলো । যে ব্যক্তি ধন দৌলতের মোহে বেপরওয়া হইয়া গেলো সে হেয় হইয়া গেলো , যে ব্যক্তি লোকের নিকট ইজ্জত চাহিলো সে অপমানিত হইয়া গেলো । জনৈক হাকীম বলিয়াছেন , আল্লাহর মারেফাতের লক্ষণ তিনটি আল্লাহতায়ালার প্রতি হায়া শরম রাখা , আল্লাহর জন্য মহব্বত রাখা এবং তাঁহার সহিত ঘনিষ্ঠতা রাখা । রাছুলুল্লাহ ( ছাঃ ) বলিয়াছেন - মুহব্বত আল্লাহর পরিচয়ের বুনিয়াদ , গোনাহ হইতে বাঁচিয়া থাকা একীনের ( অটল বিশ্বাসের ) লক্ষণ এবং তকদীরের উপর রাজী থাকা একীনের পরিচয় । ছুফিয়ান বিন ওয়াইনা ( রাঃ ) বলিয়াছেন - যিনি আল্লাহকে মুহব্বত করেন তিনি ঐ ব্যক্তিকেও মুহব্বত করেন যিনি আল্লাহর মাহবুব , যিনি আল্লাহর মাহবুবকে মুহব্বত করেন তিনি আল্লাহর ওয়াস্তে G মাহবুবের প্রিয় বস্তুকেও মুহব্বত করেন । 512 রাছুলুল্লাহ ( ছাঃ ) বলিয়াছেন , তিন উপায়ে খাঁটি মুহব্বতের পরিচয় পাওয়া যায় - দোস্তের কথা অপরের কথার উপর প্রধান্য দেওয়া , দোস্তের সংগে উঠা বসাকে অপরের সংগে উঠা বসার উপর প্রাধান্য দেওয়া এবং দোস্তের রেজা বা সন্তুষ্টিকে অপরের সন্তুষ্টির উপর প্রাধান্য দেওয়া । হযরত ওহাব বিন মুনাব্বের ( রাঃ ) বলিয়াছেন , তাওরাতে লিখা আছে লোভী যদি সারাজাহানের বাদশাহ্ও হয় তবুও সে দরিদ্র , আল্লাহর অনুগত ব্যক্তি যদি গোলামও হয় তবুও সে তাবেদারীর পাত্র এবং কেনায়াত কারী ( অল্পে তুষ্ট ব্যক্তি ) যদিও অনাহারে থাকে তবুও সে ধনবান । কোনো হাকীম বলিয়াছেন , যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিচয় পাইয়াছে লোক সমাজে সে স্বাদ বা আনন্দ পায়না । যে ব্যক্তি দুনিয়ার পরিচয় পাইয়াছে দুনিয়ার প্রতি তাহার আগ্রহ থাকে না এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর 


 পৃষ্ঠা নাম্বার ২৩ 

আদল বা ন্যায়বিচারের পরিচয় পাইয়াছে শত্রুগণ তাহার নিকট আসে শত্রুর সংগেও কারবার না অর্থ্যাৎ আল্লাহর ন্যায় বিচারের ভয়ে পরিষ্কার রাখিবে এবং কখনো শত্রুর সঙ্গে বিবাদ বিসম্বাদ করিবে না । হযরত জুন্নুন মিছরী ( রাঃ ) বলিয়াছেন - যে ব্যক্তি কোন কিছুর ভয় করে সে তাহা হইতে পলায়ন করে , যে ব্যক্তি কোনো কিছুর খাহেশ রাখে সে তাহা তলব করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহর সহিত ঘনিষ্ঠতা রাখে সে তাহার নফ্‌ছকে ভয় করে । তিনি আরো বলিয়াছেন , যিনি আল্লাহর আরেফ বা মারেফাত প্রাপ্ত তিন তাঁহার নিকট বন্দী , তাঁহার দেল ( আল্লাহর কুদরত ) দর্শন করে এবং আল্লাহর জন্য তাঁহার আমল অধিক পরিমানে হইয়া থাকে । যিনি আল্লাহর আরেফ তিনি তাঁহার কৃতজ্ঞ , তাঁহার রৌশন আল্লাহর জন্য , তাঁহার আমল পাকছাফ । ইবনে ছোলায়মান ( রাঃ ) বলিয়াছেন দুনিয়া ও আখেরাতের সর্বপ্রকার ভালাইর মূল - আল্লাহতায়ালাকে ভয় করা , দুনিয়ার চাবি উদর পূর্ণকরা এবং আখেরাতের চাবি ক্ষুধা অর্থ্যাৎ উদর পুরিয়া আহার করা দুনিয়ার কাজ এবং এবাদতের উদ্দেশ্যে উদরকে খালি রাখা আখেরাতের কাজ । কথিত আছে এবাদত একটি ব্যবসা , তাহার দোকান নির্জ্জন বাস , তাহার মূলধন পরহেজগারী এবং তাহার লাভ বেহেশত । হযরত মালেক বিন দীনার ( রাঃ ) বলিয়াছেন , তিনটির পরিবর্তে তিনটিকে গ্রহণ করো তবে তুমি মোমিনদের মধ্যে গণ্য হইবে অহংকারের পরিবর্তে তাওয়াজু বা বিনয় , লোভের পরিবর্তে কেনায়াত বা অল্পে তুষ্টি , হিংসার পরিবর্তে পরের মঙ্গল কামনা ।


বিঃদ্রঃ মুনাব্বেহাত ্কিতাব ধারাবাহিক ভাবে চলবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post