মুনাব্বেহাত ( সাবধানমূলক উপদেশাবলী ) 

মুনাব্বেহাত



পৃষ্ঠা নাম্বার ৯  

হযরত রাছুলে করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহে অছাল্লাম বলিয়াছেন , এমন দুইটি খাছলত আছে যাহার চেয়ে উত্তম আর কিছু নহে আল্লাহতায়ালার উপর ঈমান আনা এবং মুসলমানদের উপকার করা ; আর দুইটি খাছলত আছে যাহার চেয়ে মন্দ আর কিছু নাই আল্লাহতায়ালার সংগে শেরেক করা এবং মুসলমানদের অনিষ্ট করা । রাছুলুল্লাহ ( দঃ ) বলিয়াছেন , আলেমগণের সংগে উঠাবসা করা এবং জ্ঞানী লোকের কথা শ্রবণ করা তোমাদের উপর ওয়াজিব , কেননা আল্লাহতায়ালা হেকমতের নূর দ্বারা মোরদা দেলকে জীবিত করে , যেরূপ বৃষ্টির পানি মোরদা জমিনকে জীবিত করে । হযরত আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন , যে ব্যক্তি বিনাসম্বলে কবরে প্রবেশ করিল সে যেন বিনা কিতিতে সমুদ্রে যাত্রা করিল । হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন , দুনিয়ার ইজ্জত মালের দ্বারা আর আখেরাতের ইজ্জত নেক আমল দ্বারা । প্রচার হযরত ওছমান রাদিয়াল্লাহু ' আনহু ’ বলিয়াছেন , দুনিয়ার চিন্তা ভাবনা দেলের জুলমাত বা কালিমা সৃষ্টি করে আর আখেরাতের চিন্তা ভাবনা দেলের নূর সৃষ্টি করে ।


পৃষ্ঠা নাম্বার ১০ 

হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন , যে ব্যক্তি এলেন তালাস করে বেহেশত তাহাকে তালাস করে । যে ব্যক্তি গোনাহ তালাস করে দোজখ তাহাকে তালাস করে । ইয়াহইয়া - বিন - মুয়াজ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলিয়াছেন , কোন বু বা সম্মানী লোক গোনাহ করেনা আর কোন বুদ্ধিমান লোক দুনিয়াকে আখেরাতের উপর প্রধান্য দেন না । হযরত আ'মাশ ( রাঃ ) বলিয়াছেন , যাহার মূলধন তাকওয়া বা পরহেজগারী তাহার জবান দীনের উপকারিতা বর্ণনা করিতে করিতে অবশ হইয়া যায় , আর যাহার মূলধন দুনিয়া তাহার জবান দীনের ক্ষতি বর্ণনা করিতে করিতে অবশ হইয়া যায় । হযরত ছুইয়ান ( রাঃ ) বলিয়াছেন , যে কোন গোনাহ খাহেশে নফছানী বা কু - প্রবৃত্তির তাড়নায় হইয়া যায় তাহা মা’ফীর আশা করা যায় । আর যে কোন গোনাহ অহঙ্কার হইতে উৎপন্ন হয় , তাহার মা'ফীর আশা করা যায় না , কেননা ইবলিছের গোনাহের মুলে ছিল । অহঙ্কার , আর আদম আলাইহেচ্ছালামের লগজেস বা পদস্খলনের মূলে ছিল নক্‌ছের তাড়না । কোন দরবেশ বলিয়াছেন , যে ব্যক্তি গোনাহ করে অথচ হাসে আল্লাহতায়ালা তাহাকে এমতাবস্থায় দোজখে নিক্ষেপ করিবেন যে সে কাঁদিতে থাকিবে । আর যে ব্যক্তি আল্লাহতায়ালার তাবেদারী করে এবং কাঁদে আল্লাহতায়ালা তাহাকে এমতাবস্থায় বেহেশতে দাখেল করিবেন যখন সে হাসিতে থাকিবে । জনৈক মহাপুরুষ বলিয়াছেন , গোনাহের উৎপত্তি হয় । ছগীরা গোনাহকে তুচ্ছ মনে করিওনা কেননা তাহা হইতে কবীরা রাছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহ আলাইয়ে অছাল্লাম বলিয়াছেন , গোনাহে ছগীরা ( ছোট গোনাহ ) বার বার করিলে ছগীরা থাকেনা ( বরং গোনাহে কবীরা হইয়া যায় ) আর গোনাহে কবীরা করিয়া মা'ফী চাহিলে তাহা কবীরা থাকে না বরং মা'ফ হইয়া যায় ।


পৃষ্ঠা নাম্বার ১১ 

কথিত আছে , আরেফের ( মারফত প্রাপ্ত লোক ) লক্ষ্য আল্লাহর ছানা বা প্রশংসা করা , জাহেদের ( সংসার বিরাগী ) লক্ষ্য দোয়া করা কেননা আরেফ এর লক্ষ্য একমাত্র আল্লাহ এবং জাহেদের লক্ষ্য নিজের নফ্‌ছ বা নিজের স্বাস্থ্য ও মংগল কামনা করা । জনৈক হাকীম ( বিজ্ঞ লোক ) বলিয়াছেন , যে কোন ব্যক্তি এই ধারণা করে যে আল্লাহতায়ালা ছাড়া অপর কেহ তাহার নিকট ঘনিষ্ট দোস্ত , আল্লাহ সম্পর্কে তাহার পরিচয় অতি অল্প , আর যে ব্যক্তি ধারণা করে যে তাহার নফ্‌ছ অপেক্ষা অপর কেহ তাহার অধিক দুশমন , নছ সম্বন্ধে তাহার পরিচয় অতিঅল্প । হযরত আবুবকর ছিদ্দীক ( রাঃ ) আল্লাহর কালাম জাহারাল ফাছাদু ফিল বার্রে অল বাহরে ' ( ফাছাদ জলে স্থলে প্রকাশ হইয়া পড়িয়াছে ) সম্বন্ধে বলিয়াছেন , ' বার ' স্থল ইহার মতলব জবান এবং ' বাহার ' সমুদ্র ইহার মতলব দেল , যখন জবান নষ্ট হইয়া যায় তখন তাহার জন্য জীবজন্তু কাঁদিতে থাকে , আর যখন দেল নষ্ট হইয়া যায় তখন তাহার জন্য ফেরেশ্তাগণ কাদিতে থাকে । কথিত আছে , খাহেসে নফছানী ( কূপ্রবৃত্তি ) বাদশাহগণকে গোলাম বানাইয়া দেয় এবং ছবর গোলামকে বাদশাহ বানাইয়া দেয় । হযরত ইউছুফ আলাইহেচ্ছালাম ও জুলাইখার কাহিনী কি তোমার জানা নাই ? কথিত আছে , তাহার জন্য শুভ সংবাদ যাহার আকল আমীর এবং খাহেশে নফ্‌ছানী তাহার হস্তে বন্দী । তাহার জন্য ধ্বংস যাহার খাহেশে নক্‌ছানী চালক এবং তাহার আকল তাহার হস্তে বন্দী । কথিত আছে যে ব্যক্তি গোনাহ ত্যাগ করে তাহার কালব নরম হইয়া যায় ; যে ব্যক্তি হারাম ত্যাগ করে এবং হালাল খায় তাহার চিন্তা ও খেয়াল পাক ছাফ হইয়া যায় । আল্লাহতায়ালা কোন নবীর নিকট এই মর্মে অহী পাঠাইলেন “ আমার হুকুমের তাবেদারী কর এবং আমার নছিহতের নাফরমানী করিও না । ”


পৃষ্ঠা নাম্বার ১২ 

কথিত আছে , আল্লাহর রেজামন্দির বা সন্তুষ্টির তাবেদারী করা ও তাহার অসন্তুষ্টি হইতে দূরে সরিয়া থাকা কামেল বা পরিপক্ক আকলের কথিত আছে , বিদ্বান ব্যক্তির বাড়ীঘর সব যায়গায় এবং মূর্খের পরিচয় । কোন বাড়ীঘর নাই । কথিত আছে , যে ব্যক্তি আল্লাহর বন্দেগী করিয়া তাহার নজদিগী । বা সান্নিধ্য লাভ করিয়াছেন তিনি লোক সমাজে অনাদৃত । কথিত আছে , এবাদতের জন্য নড়াচড়া করা আল্লাহর মারেফাতের প্রমাণ যেরূপ দেহের নড়াচড়া হায়াতের প্রমাণ । রাছুলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলায়হে অছাল্লাম বলিয়াছেন , দুনিয়ার মুহব্বত সকল গোনার মূল , ওশর ( জমিনের উৎপন্ন জাত ফসলের দশমাংশ ) ও জাকাত আদায় না করা সমস্ত ফাছাদের মূল । কথিত আছে , সর্বদা নিজের ত্রুটি স্বীকার করা প্রশংসার বিষয় আর ত্রুটি স্বীকার করাই কবুলিয়াত বা আল্লাহর প্রিয় হইবার লক্ষণ । কথিত আছে , আল্লাহর নেয়ামতের নাশুক্রূরী করা বখীলি এবং আহমকের সংগী হওয়া দুর্ভাগ্য । জনৈক কবি বলিয়াছেন , “ ওহে দুনিয়া লইয়া ব্যস্ত - দীর্ঘ বাসনা তোমাকে ধোকায় ফেলিয়াছে । তুমি গাফলাতে পড়িয়া জীবনকে বরাবাদ করিয়াছ এমতাবস্থায় মৌত নিকটে আসিয়া পৌছিয়াছে , হঠাৎ মৌত আসিয়া উপস্থিত হইবে , -তোমার কবরই তোমার আমলের সিন্দুক হইবে । এক্ষণে কবরের ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে ছবর কর , নির্দিষ্ট সময় ছাড়া কাহারও মৌত হয় না ।


বিঃদ্রঃ মুনাব্বেহাত ্কিতাব ধারাবাহিক ভাবে চলবে।

1 Comments

Post a Comment

Previous Post Next Post