চার মযহাবের মূল্যায়ন: লা-মযহাবী ফিতনা
(৫ম পর্ব)
মূল: ড: আবদাল-হাকিম মুরাদ (যুক্তরাজ্য)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
Understanding the Four Madhhabs: The
problem with anti-madhhabism -
5th episode
বিঃদ্রঃ ৪থ পর্বের পড় থেকে।
ঘটনা এই যে, সমতাবাদী খারেজী মতবাদ ও শিয়া আধিপত্য পরম্পরার চরম দুই পন্থার মাঝামাঝি অবস্থানকারী সুন্নী মতাদর্শভিত্তিক ইসলাম দীর্ঘ সময় যাবত নিজের কর্তৃত্বের
ধারণা সম্পর্কেই মতপার্থক্যে জড়িয়ে ছিল। সুন্নীদের কাছে কর্তৃত্ব মূলতঃ কুরআন ও সুন্নাহতে নিহিত। কিন্তু এতো বিশাল এক হাদীসশাস্ত্র যা সাহাবা-এ-কেরাম (রা:) ও তাঁদের অনুসারীদের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ার দরুণ সমগ্র ইসলামী বিশ্বের আনাচে-কানাচে বিভিন্ন আকৃতিতে ও বর্ণনায় বিস্তার লাভ করেছিল, তার মুখোমুখি হয়ে সুন্নাহকে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা কখনো কখনো কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছিল। এমন কি এই বিশাল সম্ভার, যার সমষ্টি কয়েক লক্ষ রওয়ায়াত (বর্ণনা),
তা থেকে বিশুদ্ধ হাদীসগুলো বাছাই করে নেয়ার পরও এমন কিছু হাদীস ছিল যেগুলো দৃশ্যতঃ পরস্পরবিরোধী, বা আল-কুরআনের আয়াতের সাথেও অসামঞ্জস্যপূর্ণ। এটি স্পষ্ট
ছিল যে খারেজীদের মতো হাদীসের একটি ছোট্ট সংগ্রহশালা গঠন করে তা থেকে সরাসরি নীতিমালা প্রণয়ন ও আইন- কানুন বের করার সহজ পন্থা অবলম্বন এ ক্ষেত্রে কার্যকরী নয়। হাদীসগুলোর অভ্যন্তরীন অসামঞ্জস্য এতো অধিক সংখ্যক এবং সেগুলোর প্রতি আরোপিত ব্যাখ্যাগুলো এতো জটিল ছিল যে কাজী (বিচারক)-মণ্ডলীর পক্ষে স্রেফ
কুরআন মজীদের ও হাদীস শাস্ত্রের কোনো সংশ্লিষ্ট পাতা খুলে রায় দেয়া সম্ভবই ছিল না। প্রাথমিক যুগের উলেমাবৃন্দ বিভিন্ন লিপির মধ্যকার বাহ্যিক অসঙ্গতির অন্তর্নিহিত কারণ গুলো সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম বিচার-বিশ্লেষণ করেন; এটি করার সময় অহরহ- ই সবচেয়ে তীক্ষ্ণ স্মৃতি শক্তি সম্পন্ন প্রথিতযশা উলেমাদের
মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী বিতর্ক চলেছিল। উসূলে ফেকাহ (ইসলামী বিধানের মৌলনীতি)- এর বেশির ভাগ অংশ প্রণয়ন করা হয়েছিল এ ধরনের অসঙ্গতি দূরীকরণের একটি নিয়ম,
যা ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি বিশ্বস্ততা নিশ্চিত করে, তা জারি করতে। ‘তায়ারুদ আল-আদিল্লা’ (প্রামাণ্য দলিলাদির পরস্পরবিরোধিতা) শব্দটি মুসলমানদের আইন শাস্ত্রের সবচেয়ে সংবেদনশীল ও জটিল বিষয় হিসেবে ইসলামী ফেকাহর সকল ছাত্রের কাছেই পরিচিত। ইবনে কুতাইবা (রহ:)-এর মতো প্রাথমিক যুগের আলেমবৃন্দ এই বিষয়ে গোটা বই উৎসর্গ করার বাধ্যবাধকতা অনুভব করেছিলেন। উসূলের
উলেমাবৃন্দ তাঁদের গবেষণার শুরুতেই ধরে নেন যে শাস্ত্র লিপির পরস্পরবিরোধিতা মহানবী (দ:) কর্তৃক প্রকাশিত বিধাতা (খোদাতা’লা)-র ঐশী বিধানের কোনো অসঙ্গতি প্রতিফলন করে না, বরং তা বিভিন্ন ব্যাখ্যার অসামঞ্জস্যতা-ই পরিস্ফুট করে। ইসলামের মর্মবাণী হুযূর পূর নূর (দ:)-এর বেসাল (পরলোকে আল্লাহর সাথে মিলন)-প্রাপ্তির আগেই নিখুঁতভাবে পৌঁছানো হয়েছিল; আর এর অব্যবহিত পরের উলেমাবৃন্দের কাজ ছিল শুধু তা ব্যাখ্যা করা, সংস্কার বা সংশোধন করা নয়।
চলবে---------।
৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন
Nice post
ReplyDeleteNice
ReplyDeletePost a Comment