চার মযহাবের মূল্যায়ন: লা- মযহাবী ফিতনা
(৩য় পর্ব)
মূল: ড: আবদাল-হাকিম মুরাদ (যুক্তরাজ্য)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
Understanding the Four Madhhabs: The
problem with anti-madhhabism -
3rd episode
বিঃদ্রঃ দ্বিতীয় পর্বের পড় থেকে।
হযরত আলী (ক:)-এর বেসাল (পরলোকে খোদার সাথে মিলনপ্রাপ্তি)-পরবর্তীকালের অন্ধ সমর্থক (শিয়া)- রা পূর্ববর্তী খলীফাবৃন্দকে নৈতিকভাবে অধঃপতিত মনে করে ধর্মীয় কর্তৃত্বের এমন একটি থিওরীর জন্ম দেয়, যা ঐতিহ্যবাহী সাম্যের ধারণাকে পরিত্যাগ করে ধর্মীয় কর্তৃত্ব অর্পণ করে ভক্তি সঞ্চারের ক্ষমতাধর ইমামবর্গের এক পরম্পরার কাছে। আমাদের এখানে থামা উচিত হবে না এই প্রশ্নের উত্তর যাচাই
করতে যে প্রাচ্যদেশীয় খৃষ্টমত হতে ধর্মান্তরিত কতিপয় নও-মুসলিম দ্বারা এ ধারণাটি প্রভাবিত ছিল কি-না, যারা যীশু
খৃষ্টের ভাববাদী বার্তাবাহক (হাওয়ারী)- দের উত্তরাধিকারের ধারণায় পুষ্ট ছিল, যে দানের বদৌলতে অনুমান করা হয় খৃষ্টান
চার্চকে দেয়া হয়েছিল পরবর্তী প্রজন্মগুলোর মাঝে যীশু খৃষ্টের দর্শন প্রচারের অনন্য ক্ষমতা। এখানে সঠিকভাবে যার মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন তা হলো, প্রাথমিক যুগের ইসলামী সমাজে ব্যাপকভাবে অনুভূত চূড়ান্ত ধর্মীয় কর্তৃত্বের অভাবের প্রত্যুত্তর হিসেবেই অগণিত সংখ্যক আকার-আকৃতির শিয়া মতবাদ বিকশিত হয়েছিল। খুলাফায়ে রাশেদীন তথা সত্যনিষ্ঠ ও ন্যায়পরায়ণ শাসকদের যুগ শেষ হয়ে এলে পরে, এবং মো’মেন (বিশ্বাসী)-দের নেতা হিসেবে যে জীবন যাপন
পদ্ধতি উমাইয়া শাসকবর্গের কাছ থেকে প্রত্যাশা করা হচ্ছিল,
তা হতে তাঁরা নজর-কাড়া ক্রমাগত বিচ্যুতিতে গা ভাসালে, চরম পরস্পরবিরোধী ও সদ্য জন্ম নেয়া ফেকাহর
মযহাবগুলোকে এমতাবস্থায় মনে হচ্ছিল ধর্মীয় বিষয়াদিতে শক্তিশালী ও দ্ব্যর্থহীন কর্তৃত্ব রক্ষায় ঘাটতিপূর্ণ। এরই
ফলশ্রুতিতে নিখুঁত ইমামসম্পর্কিত ধারণার অপ্রতিরোধ্য চিত্তাকর্ষণ বারংবার ঘটতে থাকে। ইমাম মতবাদের উত্থানের এই ব্যাখ্যাটি শিয়া মতবাদের সম্প্রসারণের দ্বিতীয় বড় পর্যায় সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিতেও সহায়তা করে। হিজরী পঞ্চম শতকের
সুন্নী পুনর্জাগরণের সাফল্যের পরে যখন সুন্নী মতাদর্শকে অবশেষে অবিভক্তমএকটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা মনে হচ্ছিল, ঠিক
তখনি শিয়া মতবাদ ধীরে ধীরে ম্লান হতে থাকে। এর চরমপন্থী শাখা, ইসমাইলী শিয়া সম্প্রদায়, ইমাম গাযযালী (রহ:)-এর তোপের মুখে পড়ে, যাঁর প্রণীত ‘বাতেনীদের নানা কলংক’
বইটি তাদের গোপন ধ্যান- ধারণাকে প্রলয়ংকরী শক্তিসহ উম্মোচিত ও মূলোৎপাটিত করে। শিয়াদের এই পতন সপ্তম
হিজরী শতকের মাঝামাঝি সময়ে এসে থামে, যখন চেঙ্গিস খানের অধীনে মংগল বাহিনী ইসলামের শাসনাধীন মধ্য (এশীয়) অঞ্চলের দেশগুলো দখল করে নেয় এবং ধ্বংস
করে ফেলে। এই আক্রমণেরমভয়াবহতা কল্পনাতীত; উদাহরণস্বরূপ, আমরা ইতিহাস থেকে জানতে পারি, হেরাট
শহরের এক লক্ষ অধিবাসীর মধ্যে মাত্র চল্লিশজন আগুনে ভস্মিভূত নগরীর ধ্বংসস্তুপ থেকে বেরিয়ে আসেন ওই ধ্বংসযজ্ঞের সাক্ষী হতে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির এই করাল
গ্রাস কাটতে না কাটতেই নব্য-ধর্মান্তরিত তুর্কমান যাযাবর জাতি বিধ্বস্ত নগরীগুলোতে প্রবেশ করে; নগরীগুলোর
সুন্নী উলেমাবৃন্দ ইতোমধ্যে শহীদ হওয়ায় এবং ভয়-ভীতি ও গণ্ডগোলের পরিবেশ বিরাজ করায়, অধিকন্তু আকাশে- বাতাসে মুক্তিদূত আবির্ভাবের প্রত্যাশা থাকায় তুর্কমান যাযাবর জাতি শিয়া মতবাদের সবচেয়ে উগ্র আকার ধারণ করে। শিয়াদের ইরান দখল, যা এক সময় সুন্নীদের অনুগত রাজ্য ছিল, তা ইতিহাসের ওই বেদনাদায়ক অধ্যায়েই
সংঘটিত হয়েছিল।
চলবে---------।
মাজহাব বিষয় টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
ReplyDeleteচালিয়ে যান
Post a Comment