পবিত্র কুরবানী কী?

কোরবানি কি


‘কুরবানী’ শব্দটি আরবী قُرْبَانٌ ‘কুরবান’ শব্দ হতে উদ্ভূত যার শাব্দিক অর্থ নৈকট্য, যা শব্দমূল قُرْب ‘কুর্ব’ শব্দ থেকে উদগত। নিকটবর্তী হওয়া বা নৈকট্য লাভ করা, বিলীন হওয়া, উৎসর্গ করা অর্থে قُرْبَانٌ ‘কুরবান’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়।  শরীয়ত উনার পরিভাষায় খালিক্ব, মালিক, রব মহান আল্লাহ পাক উনার সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার নামে নির্দিষ্ট তারিখে নির্দিষ্ট নিয়মে নির্দিষ্ট প্রাণী যবেহ করার নাম পবিত্র কুরবানী। অর্থাৎ পবিত্র যিলহজ্জ শরীফ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের যে কোন দিনে দুম্বা, মেষ, ভেড়া, খাসী, ছাগল, উট, গরু, মহিষ প্রভৃতি গৃহপালিত হালাল চতুষ্পদ প্রাণীসমূহকে মহান আল্লাহ পাক উনার পবিত্র নাম মুবারক উচ্চারণ করে উনার সন্তুষ্টি মুবারক লাভের উদ্দেশ্যে যবেহ করাকে পবিত্র কুরবানী বলে। পবিত্র কুরবানী হচ্ছে আবুল মুসলিমীন হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত।

 এ প্রসঙ্গে পবিত্র কালামুল্লাহ শরীফ উনার মাঝে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-


فَصَلِّ لِرَبِّكَ وَانْحَرْ


অতএব, আপনার রব তা’য়ালা উনার জন্য পবিত্র নামায পড়ুন ও কুরবানী করুন। (পবিত্র সূরা কাওছার শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২)


আর পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে বর্ণিত রয়েছে-


عَنْ حَضْرَتْ زَيِدِ بْنِ اَرْقَمَ رَضِىَ اللهُ تَعَالـٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ اَصْحَابُ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ! مَا هذِهِ الْاَضَاحِىْ؟ قَالَ سُنَّةُ اَبِيْكُمْ اِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ الـسَّلاَمُ


অর্থ: “হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন, হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! এই কুরবানী কি? তিনি জাওয়াবে বললেন, আপনাদের পিতা হযরত ইবরাহীম আলাইহিস সালাম উনার সুন্নত।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ, ইবনে মাজাহ শরীফ, মিশকাত শরীফ)

আরও পড়ুন কার উপর কোরবানি ওয়াজিব 

পবিত্র কুরবানী উনার বিধান শুধু উম্মতে হাবীবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের জন্যেই দেয়া হয়েছে তা নয় বরং পূর্ববর্তী প্রত্যেক উম্মতের প্রতিও পবিত্র কুরবানী উনার বিধান প্রবর্তিত ছিল।


যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-


لِكُلّ اُمَّةٍ جَعَلْنَا مَنسَكًا لّيَذْكُرُ‌وا اسْمَ اللهِ عَلـٰى مَا رَ‌زَقَهُم مّن بَـهِيْمَةِ الاَنْعَامِ ۗ


অর্থ : “আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য পবিত্র কুরবানী উনার বিধান দিয়েছি, যাতে তারা গৃহপালিত পশুর উপরে মহান আল্লাহ তায়ালা উনার নাম মুবারক স্মরণ করে। অর্থাৎ মহান আল্লাহ তায়ালা উনার সন্তুষ্টি ও নির্দেশ মুতাবিক উনার নামে পশু কুরবানী করে।” (পবিত্র সূরা হজ্জ শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ৩৪)


কুরবানী সম্পর্কে মহান আল্লাহ পাক তিনি ইরশাদ মুবারক করেন-


فَلَمَّا بَلَغَ مَعَهُ السَّعْيَ قَالَ يَا بُنَيَّ إِنِّي أَرٰ‌ى فِي الْمَنَامِ أَنِّي أَذْبَـحُكَ فَانظُرْ‌ مَاذَا تَرٰىۚ قَالَ يَا أَبَتِ افْعَلْ مَا تُؤْمَرُۖ سَتَجِدُنِي إِن شَاءَ اللهُ مِنَ الصَّابِرِ‌ينَ◌ فَلَمَّا أَسْلَمَا وَتَلَّهُ لِلْجَبِينِ◌ وَنَادَيْنَاهُ أَن يَا إِبْرَ‌اهِيمُ◌ قَدْ صَدَّقْتَ الرُّ‌ؤْيَاۚ إِنَّا كَذٰلِكَ نَـجْزِي الْمُحْسِنِينَ◌ إِنَّ هـٰذَا لَـهُوَ الْبَلَاءُ الْمُبِينُ◌ وَفَدَيْنَاهُ بِذِبْحٍ عَظِيمٍ◌ وَتَرَ‌كْنَا عَلَيْهِ فِي الْاٰخِرِ‌ينَ◌ سَلَامٌ عَلٰى اِبْرَ‌اهِيمَ◌ كَذٰلِكَ نَـجْزِي الْمُحْسِنِينَ◌ اِنَّهُ مِنْ عِبَادِنَا الْمُؤْمِنِيْنَ◌


অর্থ: “অতঃপর তিনি (হযরত যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি) যখন উনার সম্মানিত পিতা হযরত ইবরাহিম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার সাথে চলাফিরা করার বয়স মুবারক-এ পৌঁছালেন, তখন হযরত ইবরাহিম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, হে আমার সম্মানিত আওলাদ! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আপনাকে যবেহ করছি, এখন বলুন, আপনার অভিমত কী? হযরত ঈসমাইল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি বললেন, ‘হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে আপনি তাই করুন, মহান আল্লাহ পাক উনার ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্যশীলই পাবেন। দু‘জনেই যখন আনুগত্যে মাথা নুইয়ে দিলেন আর হযরত ইবরাহিম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম তিনি হযরত ঈসমাইল যবীহুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনাকে কাত করে শুইয়ে দিলেন। তখন আমি উনাকে জানিয়ে দিলাম, ‘হে খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম! স্বপ্নে দেয়া আদেশ মুবারক আপনি সত্যে পরিণত করেছেন। এভাবেই আমি সৎকর্মশীলদেরকে প্রতিদান দিয়ে থাকি। অবশ্যই এটা ছিল একটি সুস্পষ্ট পরীক্ষা। আমি এক মহান কুরবানী উনার বিনিময়ে আপনার আওলাদ উনাকে ছাড়িয়ে নিলাম। আর আমি উনাকে পরবর্তীদের মাঝে স্মরণীয় করে রাখলাম। হযরত খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম উনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক! সৎকর্মশীলদেরকে আমি এভাবেই প্রতিদান দিয়ে থাকি। তিনি ছিলেন আমার মু’মিন বান্দা উনাদের অন্তর্ভুক্ত।” (পবিত্র সূরা আছ-ছফফাত শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ১০০-১১১)


❑ কুরবানীর আঞ্জাম না দিলে কি পরিণতি


পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-


عَنْ حَضْرَتْ اَبِـي هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ وَجَدَ سَعَةً فَلَمْ يُضَحِّ فَلَا يَقْرَبَنَّ مُصَلَّانَا


অর্থ : “হযরত আবূ হুরায়রা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বর্ণনা করেন। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, সামর্থ থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করবেনা সে যেনো ঈদগাহের নিকটে না আসে।” (মুসনাদে আহমদ শরীফ)

Post a Comment

Previous Post Next Post