২৭শে রমাদ্বান শবে কদর হওয়া প্রসংগঃ

২৭শে রমাদ্বান শবে কদর হওয়া প্রসংগঃ


নবিপাকের বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে,লাইলাতুল ক্বদরের রাত্রিটি নাজাতের দশক তথা শেষ দশদিনেই নিহিত রয়েছে। হাজার মাসের চেয়েও দামি ক্বদরের সম্ভাবনা প্রত্যেক বেজোড় রাত ২১,২৩,২৫,২৭,২৯ তেই রয়েছে। কিন্তু সাধারণ জনগণ যারা বিশেষত গ্রামাঞ্চলে আছেন তারা পূর্বের মুরুব্বিদের পথনির্দেশনা হিসেবে এবং যারা দৈনন্দিন কাজে কর্মক্ষেত্রে ব্যতিব্যস্ততার জন্য ইবাদাতের যথেষ্ট সুযোগ পাননা তারা অবসর তৈরী করে নিয়ে, বিশেষ করে ২৭তম রজনীতে ক্বদর তালাশ করেন।আর তখন তাদের মন টা ভেঙে দেন কিছু কিতাব খেয়ানতকারী আধা শিক্ষিত পাব্লিক ,যারা ২৭ কে বিশেষ মনে করাকে বিদআত বলে আখ্যায়িত করে অবুঝ পাব্লিকগুলো ক্বদর হতে মাহরুম/বিরত রাখার শয়তানী পায়তারা করেন।

আরও পড়ুনঃ- রোজার সুন্নত ও আদব সমূহ 

➤➤➤ইমাম তিরমিজি উনার 'জামি' তে 'কিতাবুসসাওম' এ 'তরজুমাতুল বাব' باب مَا جَاءَ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ /লাইলাতুল ক্বদর এর আলোচনা'য় বর্ণনা করেন—


وَقَدْ رُوِيَ عَنْ أُبَىِّ بْنِ كَعْبٍ أَنَّهُ كَانَ يَحْلِفُ أَنَّهَا لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ ‏


—হযরত উবাই ইবনু কাব রাঃ (যিনি তারাবিহর জামাতের ইমাম) হতে বর্ণিত,তিনি কসম করে বলেছেন,তা (লাইলাতুল ক্বদর) হল সাতাশ তারিখের রাত্রি।»


হযরত কাব রাঃ উনার কথার সাক্ষ্য হিসেবে ফুকাহাতুস সাহাবা সৈয়্যদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ এর কথা বলেন এভাবে —


وَاللَّهِ لَقَدْ عَلِمَ ابْنُ مَسْعُودٍ أَنَّهَا فِي رَمَضَانَ وَأَنَّهَا لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ

—(কাব বলেন) আল্লাহর কসম!ইবনু মাসউদ রাঃ ও জানেন যে, সেটা হচ্ছে রমযানের রাত এবং সাতাশেরই রাত।


কিন্তু,যদি এই ব্যাপারটা 'খাস' বা স্পেশাল করে দেয়া হয় তবে মানুষজন ইবাদত কমিয়ে দিবে,যারপরনাই উবাই ইবনু কাব রাঃ তৎক্ষণাত বলেন—


«وَلَكِنْ كَرِهَ أَنْ يُخْبِرَكُمْ فَتَتَّكِلُوا


—কিন্তু তোমাদেরকে তিনি(ইবনে মাসউদ) তা জানাতে পছন্দ করেননি, তোমরা যদি পরে এটার উপর নির্ভর করে বসে থাক।»


আর বর্তমানে অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে রীতিমতো লাইলাতুল ক্বদর কে ২৭ তারিখে তালাশ করাকে বিদআত মনে করা হচ্ছে।এখন আমরা দেখে নিবো লাইলাতুল ক্বদর ২৭ হবার ব্যাপারে বর্ণিত কিছু হাদীস।


➤➤হাদীস নং ১:—


«عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ، عَنِ النَّبِيِّ صلي الله عليه وسلم فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ قَالَ,"‏ لَيْلَةُ الْقَدْرِ لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ"‏


— আমিরে মুয়াবিয়া রাঃ বর্ণনা করেন,নবীকরিম ﷺ লাইলাতুল ক্বদর সম্পর্কে বলেছেনঃ লাইলাতুল ক্বদর সাতাশের রাতে।(সহিহ)


হাদীসটি বর্ণিত আছে:—


★সুনানু আবি দাউদ,হাদিস নং ১৩৮৬

★আত-তামহীদ,২/২০৫,ইমাম ইবনে আব্দিল বার মালেকী 

★শরহু মা'আনিল আছার,৩/৯৩,ইমাম ত্বাহাবী

★সহিহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং ৩৬৮০

★মু'জামুল কাবীর,১৯ তম খন্ড ৮১৩নং হাদীস,ইমাম তাবারানি

★মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা,৩/৭৬

★সুনানু কুবরা,৩/৩১২,ইমাম বায়হাক্বী


➤➤হাদীস নং ২:—


মুসলিম শরীফে উল্লেখ আছে,হযরত যির র. বলেন,


«فَقُلْتُ إِنَّ أَخَاكَ ابْنَ مَسْعُودٍ يَقُولُ مَنْ يَقُمِ الْحَوْلَ يُصِبْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ‏.‏ فَقَالَ رَحِمَهُ اللَّهُ أَرَادَ أَنْ لاَ يَتَّكِلَ النَّاسُ أَمَا إِنَّهُ قَدْ عَلِمَ أَنَّهَا فِي رَمَضَانَ وَأَنَّهَا فِي الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ وَأَنَّهَا لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ ‏.‏ ثُمَّ حَلَفَ لاَ يَسْتَثْنِي أَنَّهَا لَيْلَةُ سَبْعٍ وَعِشْرِينَ


—আমি উবাই ইবনু কাব রাঃ কে বললাম, আপনার ভাই আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাঃ বলেন, যে ব্যক্তি গোটা বছর রাত জাগরণ করে- সে কদরের রাতের সন্ধান পাবে। তিনি (উবাই) বললেন, আল্লাহ তাকে রহম করুন, এর দ্বারা তিনি এ কথা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, লোকেরা যেন কেবল একটি রাতের উপর ভরসা করে বসে না থাকে। অথচ তিনি অবশ্যই জানেন যে, তা রমযান মাসে শেষের দশ দিনের মধ্যে এবং ২৭তম রজনী। অতঃপর তিনি দৃঢ় শপথ করে বললেন, তা ২৭তম রজনী।»


হাদীস #২৬৬৭ (হাদীস একাডেমি)


➤➤হাদীস নং ৩:


মুসনাদ আহমদ এর ৪৮০৮ নং হাদীসে উল্লেখ—


عن بن عمر قال قال رسول الله ﷺ: من كان متحريها فليتحرها ليلة سبع وعشرين 

— হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রাঃ হতে বর্ণিত,নবিজী বলেন,তোমাদের মধ্যে যে এটা(ক্বদর) তালাশ করে সে যেন ২৭ তারিখের রাতে তালাশ করে।


ইমাম হায়সামী বলেন,হাদীসটির বর্ণনাকারীরা সকলেই বিশুদ্ধ।


হাদীসটি বর্ণিত আছে:


★শরহু মা'আনিল আছার,৩/৯১,ইমাম ত্বাহাবী


★মুসনাদু আবি দাউদ ত্বায়লিসী,১৮৮৮নং হাদীস


★সুনানু কুবরা,৪/৩১১,ইমাম বায়হাক্বী


★মাজমাউয যাওয়ায়েদ,৫০৪৫ নং হাদীস,ইমাম হায়সামী(দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ হতে প্রকাশিত)


➤➤হাদীস নং ৪:


হযরত জাবের বিন সামুরাহ রাঃ বর্ণনা করেন—


قال رسول الله ﷺ:التمسوا ليلة القدر ليلة سبع وعشرين

—নবিজী বলেন,তোমরা (রমাদ্বানের) ২৭ তম রাতে ক্বদর তালাশ করো।


ইমাম হায়সামী বলেন,বর্ণনাকারীরা সবাই সিকাহ বা বিশ্বস্ত।


হাদীসটি বর্ণিত আছে:


★মাজমাউয যাওয়ায়েদ,৫০৫৭ নং হাদীস,ইমাম হায়সামী(দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ হতে প্রকাশিত)

★মুজামুল আওসাত,হাদীস নং ৫০৯৮,ইমাম তাবারানি


➤➤হাদীস নং ৫:


হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাঃ বর্ণনা করেন একবৃদ্ধ রূগ্ন লোক নবীজীর কাছে এসে শবে ক্বদর তালাশের কথা বললে উনি বলেন—


 فقال "عليك بالسابعة"


 


—সপ্তম রাতে (২৭ তারিখ) তালাশ করো।


 ইমাম হায়সামী বলেন,হাদীসটির বর্ণনাকারীরা সবাই বিশুদ্ধ হাদীসের বর্ণনাকারী।


হাদীসটি বর্ণিত আছে:


★মুসনাদ আহমদ,১/২৪০

★মুজামুল কাবীর,১১/৩১১,নং ১১৮৩৬,ইমাম তাবারানি

★সুনানু কুবরা লিল বায়হাক্বী,৪/৩১৩

★তারিখে বাগদাদ,১০/৪৮০,খাতিবে বাগদাদী

★হিলইয়াতুল আওলিয়া,৯/২৩০

★মাজমাউয যাওয়ায়েদ,৫০৪৭ নং হাদীস,প্রাগুক্ত।


➤➤এভাবে তফসিরে রূহুল মা'আনী,১৫/৪১৩ তে উল্লেখ


وأخرج ابن أبي شيبة عن أبي ذر أنه سئل عن ليلة القدر فقال: كان عمر وحذيفة وناس من أصحب رسول الله ﷺ لا يشكون أنها ليلة سبع وعشرين. 


— ইমাম ইবনে আবি শায়বা স্বীয় মুসান্নাফে বর্ণনা করেন,হযরত আবুযর গিফারী রাঃ লাইলাতুল ক্বদরের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হলেন।তখন তিনি বললেন, হযরত ওমর রাঃ এবং হুযায়ফা রাঃ সহ অনেক সাহাবীয়ে রাসুল ﷺ হতে বর্ণিত যে,সাতাশ তারিখের রাতই শবে ক্বদর।


➤➤আবার তাফসিরে ক্বুরতুবীর ২২তম খন্ডের ৪০০ পৃষ্ঠায় এবং ইমাম জওযীর 'যাদুল মাসীর ফি উলুমিত তাফসির' এর ৯ম খন্ডের ১৭৮ পৃষ্ঠায় উল্লেখ আছে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল কারীম এবং হযরত আয়েশা সিদ্দিকা আলাইহাস সালাম হতে সাতাশ তারিখের বর্ণনা প্রমাণিত আছে।


সুতরাং


 (১)উবাই ইবনু কা'ব,


(২)আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ,


(৩)আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস,


(৪)মুয়াবিয়া ইবনে আবি সুফিয়ান, 


(৫)ওমর ইবনুল খাত্তাব,


(৬)আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর,


(৭)আবুযর গিফারী,


(৮)হুযায়ফা ইবনু ইয়ামান,


(৯)জাবের বিন সামুরাহ,


(১০)আয়েশা সিদ্দিকা এবং 


স্বয়ং 'জ্ঞানের দরজা' (১১) আলী ইবনু আবি তালিব সব সর্বমোট এগারোজন ফকিহ সাহাবী হতে 'সাবআ ঈশরিন' বা সাতাশ তারিখের বর্ণনা উল্লিখিত আছে।

Post a Comment

Previous Post Next Post