প্রসঙ্গ: শবে বরাত : আক্বীদা, আমল ও সংশ্লিষ্ট আলোচনা (একটি দলীল ভিত্তিক আর্টিকেল-২)
হাদীছ শরীফেও শবে বরাতের অশেষ ফযীলত বর্ণিত হয়েছে। যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
ان الدعاء يستجاب فى خمس ليال اول ليلة من رجب وليلة النصف من شعبان وليلة القدر المباركة وليلتا العيدين
অর্থ: “নিশ্চয়ই পাঁচ রাত্রিতে দোয়া নিশ্চিতভাবে কবুল হয়ে থাকে। (১) রজব মাসের প্রথম রাতে, (২) শবে বরাতের রাতে, (৩) ক্বদরের রাতে, (৪) ঈদুল ফিতরের রাতে, (৫) ঈদুল আযহার রাতে।”
হাদীছ শরীফে আরো ইরশাদ হয়েছে-
عن على رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا يومها فان الله تعالى ينزل فيها لغروب الشمس الى السماء الدنيا فيقول الامن مستغفر فاغفرله الا مسترزق فارزقه الا مبتلى فاعافيه الا كذا الا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: “হযরত আলী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, যখন শা’বানের পনের তারিখ রাত্রি উপস্থিত হবে তখন তোমরা উক্ত রাত্রিতে নামায আদায় করবে এবং দিনে রোযা রাখবে। কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ পাক উক্ত রাত্রিতে সূর্যাস্তের সময় পৃথিবীর আকাশে আসেন অর্থাৎ রহমতে খাছ নাযিল করেন। অতঃপর ঘোষণা করেন, “কোন ক্ষমা প্র্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব।” “কোন রিযিক প্রার্থনাকারী আছ কি? আমি তাকে রিযিক দান করব।” “কোন মুছিবতগ্রস্থ ব্যক্তি আছ কি? আমি তার মুছিবত দূর করে দিব।” এভাবে ফজর পর্যন্ত ঘোষণা করতে থাকেন।” (ইবনে মাজাহ্, মিশকাত)
এ ধরনের আরো অসংখ্য হাদীছ শরীফ রয়েছে, যাতে শবে বরাত-এর ফযীলতের কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ যারা শবে বরাত পালন করবে তারা মহান আল্লাহ পাক ও উনার হাবীব নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-উনাদের উভয়েরই খাছ রেযামন্দি বা সন্তুষ্টি লাভ করবে।
অতএব, নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, উলামায়ে “ছূ”দের উক্ত বক্তব্য ও বদ আমলের কারণে সাধারণ মুসলমানগণ ‘শবে বরাত’ পালন থেকে বিরত থেকে অশেষ ফযীলত থেকে মাহরূম হবে। যা আমলের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে ক্ষতিকর।
কাজেই যারা এ ধরনের কুফরী আক্বীদায় বিশ্বাসী ও কুফরী বক্তব্য প্রদানকারী, তারা ও হক্ব তালাশী সমঝদার মুসলমানগণ ঈমান ও আমলকে যেন হিফাযত করতে পারে। অর্থাৎ শবে বরাতসহ সকল বিষয়ে আহলে সুন্নত ওয়াল জামায়াতের আক্বীদার ন্যায় আক্বীদা পোষণ করতে পারে এবং কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস মোতাবেক আমল করে আল্লাহ পাক-উনার রেজামন্দী হাছিল করতে পারে। সে জন্যই কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা ও ক্বিয়াস-এর দৃষ্টিতে ‘লাইলাতুন নিছফি মিন শা’বান বা শবে বরাত’-এর আহকাম ও তার সংশ্লিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত ফতওয়াটি প্রকাশ করা হলো।
যেমন এ প্রসঙ্গে হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বর্ণনা করেন, নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ পাক তিনি অর্ধ শা’বানের রাত্রিতে তথা শবে বরাতে বান্দাদের প্রতি বিশেষ করুণা দৃষ্টি করেন এবং দুই শ্রেণীর লোক ব্যতীত সকলকে ক্ষমা করে থাকেন। প্রথমত: মুশরিক আর দ্বিতীয়ত: হিংসুক। আর এই শবে বরাতের রাত্রিকে পরিত্রাণ ও মুক্তির রাত্রি বলা হয়। এ প্রসঙ্গে উল্লেখ আছে-
روى حضرت ابن اسحاق عن انس بن مالك قال بعثنى رسول الله صلى الله عليه وسلم الى منزل حضرت عائشة عليها السلام فى حاجة فقلت لها اسرعى فانى تركت النبى صلى الله عليه وسلم يحدثهم عن ليلة النصف من شعبان فقالت يا انس رضى الله تعالى عنه اجلس حتى احدثك بحديث ليلة النصف من شعبان تلك الليلة كانت ليلتى من رسول الله صلى الله عليه وسلم فجاء ودخل معى فى لحافى فانتبهت من الليل فلم اجده فقلت لعله ذهب الى جاريته القبطية فخرجت فمررت فى المسجد فوقعت رجلى عليه وهو يقول سجدلك سوادى وخيالى وامن بك فؤادى وهذه يدى وما جنيت بها على نفسى يا عظيما يرجى لكل عظيم اغفر الذنب العظيم سجد وجهى للذى خلقه وصوره وشق سمعه وبصره ثم رفع رأسه فقال اللهم ارزقنى قلبا تقيا نقيا من الشرك بريا لا كافرا ولا شقيا ثم عاد ساجدا فسمعته يقول اعوذ برضاك من سخطك وبعفوك من عقوبتك وبك منك لا احصى ثناء عليك انت كما اثنيت على نفسك اقول كما قال اخى داؤد اعفر وجهى فى التراب لسيدى وحق لوجه سيدى ان يعفر) ثم رفع رأسه فقلت يا ابى أنت وأمى انت فى واد وأنا فى واد فقال يا حميراء اما تعلمين ان هذه الليلة ليلة النصف من شعبان أن الله عز وجل فى هذه الليلة عتقاء من النار بعدد شعر غنم بنى كلب الا ستة نفر لا مدمن خمر ولا عاق لوالديه ولا مصر على الزنا ولا مساوم ولا مضرب ولا قتات وفى رواية مصور بدل مضرب وتسمى ليلة القسمة والتقدير لما روى عطاء بن يسار اذا كانت ليلة النصف من شعبان نسخ لملك الموت كل من يموت من شعبان الى شعبان وان العبد ليغرس الغرس وينكح الازواج ويبنى البنيان وأن اسمه قد نسخ فى الموت الا ان يؤمر به فيقبضه.
অর্থ: হযরত ইবনে ইসহাক রহমতুল্লাহি আলাইহি বিশিষ্ট ছাহাবী হযরত আনাস ইবনে মালিক রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার থেকে বর্ণনা করেন। হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন: একদা নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি কোনো একটি জরুরী কাজে আমাকে উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনার দরবার শরীফ-এ পাঠালেন। অতঃপর আমি উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা উনাকে বললাম: আপনি শীঘ্র করুন। কেননা আমি নবীজি পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ অবস্থায় দেখে এসেছি যে, তিনি অর্ধ শা’বানের রাত্রি তথা শবে বরাত সম্পর্কে জরুরী বিষয়াবলী বর্ণনা করছেন। তখন উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়িশা ছিদ্দীক্বা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা তিনি বললেন, হে হযরত আনাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু! আপনি বসুন, আমি আপনাকে অর্ধ শা’বানের তথা শবে বরাতের রাত্রি সম্পর্কে একটি ঘটনা শুনাই।
চলবে-------------
Post a Comment