জিহাদ এর সঠিক ব্যাখ্যা 

জিহাদ




জিহাদ আরবি শব্দ। কিন্তু পশ্চিমা অপশক্তি বিশেষ করে ওয়েস্টার্ন মিডিয়া এই শব্দটির ইংরেজি ভাষান্তর করেছে হলি ওয়ার বা পবিত্র যুদ্ধ। অথচ, ইসলামের কোনো মৌলিক উৎস এবং প্রাথমিক যুগের ইসলামী সাহিত্যের কোথাও জিহাদকে এভাবে চিত্রায়িত করা হয়নি। ইসলামের পরিভাষায় জিহাদ বলতে এক গুচ্ছ কার্যক্রমকে বোঝানো হয়, যেখানে মানুষের নিত্যনৈমিত্তিক চ্যালেঞ্জ থেকে শুরু করে তার অন্যায্য কামনা-বাসনাকে নিয়ন্ত্রন, নিজের সাথে নিজের বোঝাপড়া, কিংবা পরিবারের চাহিদা পূরণ পর্যন্ত সব কিছুই রয়েছে। 


মৌলিকভাবে জিহাদ শব্দটি দিয়ে আল্লাহর পথে চেষ্টা ও সংগ্রাম করাকে বোঝানো হয়। এই কারণে জিহাদ শুধুমাত্র যুদ্ধের মাঝে সীমাবদ্ধ নয় বরং একজন মানুষ প্রতিনিয়ত নিজের কলব, নিজের বচন, নিজের দেহ এবং সম্পদকে আল্লাহ তায়ালার নির্দেশিত পথে রাখার জন্য এবং সেই নির্দেশনার আলোকে সার্বিকভাবে নিজের গোটা জীবনকে পরিচালিত করার জন্য যে প্রচেষ্টা চালায় তাকেই জিহাদ বলে। ইসলামী চিন্তাবিদরা জিহাদের নানাধরনের শ্রেণীবিন্যাস করেছেন। যেমন:

 

* ব্যক্তির নিজের সাথে জিহাদ (যাতে ইসলামকে সঠিকভাবে বোঝা যায়, সেই আলোকে কাজ করা যায়, নিজের মানোন্নয়ন করা যায়, অন্যকে ইসলামের পথে আহবান করা যায় এবং সেই আহবান করতে গিয়ে যে সমস্যাগুলো হবে- তা মোকাবেলা করা এর অন্তর্গত)। 


** শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদ (শয়তানের নানা গুঞ্জন, প্ররোচণা, সংশয়-সন্দেহ এবং প্রবৃত্তির দাসত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য যে প্রচেষ্টা চালানো হয়)।


** জিহবার বিরুদ্ধে জিহাদ (জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ করা, ভালো কাজে ব্যবহার করা এবং মন্দ কাজ থেকে নিষিদ্ধ করার আহ্বান জানানো, ইসলামের সঠিক শিক্ষাকে ছড়িয়ে দেয়া এবং মিথ্যা, মনগড়া মানব রচিত মতবাদগুলোর উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য জিহবাকে ব্যবহার করা), 


** আগ্রাসনের বিরুদ্ধে জিহাদ (যাতে মুসলমানদের জীবন, সম্পদ ও সম্মান হেফাজত করা যায়)।


**এছাড়াও আরো কয়েক ধরনের জিহাদও রয়েছে। যেমন: মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ, জালিমদের বিরুদ্ধে জিহাদ এবং যারা অন্যায় ও অনাচার করে তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ।


আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, 


আর লড়াই কর আল্লাহর পথে তাদের সাথে, যারা লড়াই করে তোমাদের সাথে। অবশ্য কারো প্রতি বাড়াবাড়ি করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সীমালঙ্ঘনকারীদেরকে পছন্দ করেন না। (সুরা আল বাকারা: আয়াত ১৯০)


অর্থ: আর তোমরা তাদের সাথে লড়াই কর, যে পর্যন্ত না ফেতনার অবসান হয় এবং আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হয়। অতঃপর যদি তারা নিবৃত হয়ে যায় তাহলে কারো প্রতি কোন জবরদস্তি নেই, কিন্তু যারা যালেম (তাদের ব্যাপার আলাদা)। (সুরা আল বাকারা: আয়াত ১৯৩)


দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইসলামই হলো একমাত্র আসমানী বিধান যার সাথে সন্ত্রাসকে জুড়ে দেয়া হয়েছে। মূলত এটা হয়েছে একপেশে মিডিয়ার কারণে, যারা ইসলামকে বরাবরই একটি উত্তেজক ও আগ্রাসী দর্শন হিসেবে উপস্থাপন করতে চেয়েছে। আপনি মিডিয়াতে কখনোই খৃস্ট্রীয় কোনো যুগকে ‘সন্ত্রাসের যুগ’ বা কোনো ইহুদিকে কখনোই সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত করতে দেখবেন না। এমনকী যদি কোনো খৃস্টান বা ইহুদি তাদের ধর্মীয় চেতনার নাম ভাঙিয়েও সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে তারপরও তাদের ধর্মকে সমালোচনার মুখে পড়তে দেখবেন না। জার্মানীর নাৎসীবাদ, কেকেকে, আইআরএ সকলেই ধর্মসূত্রে খৃস্টান হলেও তাদের কোনো অপকর্মের কারণে তাদের ধর্মকে অভিযুক্ত করতে দেখা যায় না। শুধুমাত্র ইসলামের সাথেই বিদ্বেষপূর্নভাবে এমনটা করা হয়ে থাকে।


(ইয়ুথ প্রবলেম বই থেকে)

প্রকাশনায়: বিন্দু প্রকাশ


 কপিকৃত

Post a Comment

Previous Post Next Post